রাখালবাবুর ভ্রমণ বৃত্তান্ত – (পর্ব – ৬)
নীল দ্বীপে রাখাল বাবু ছিলেন নীল বাঞ্জারা হোটেলে। লক্ষনপুরে সানসেট পয়েন্টে গিয়ে দেখেছিলেন মেঘের ঘনঘটা। সূর্যাস্ত সেভাবে দেখা হোল না। আজ তিনি ফিরবেন আবার পোর্টব্লেয়ারে। সেইমত আটটায় ঘর ছেড়ে দিয়ে ব্রেকফাস্ট খেয়ে বসে আছেন নীল বাঞ্জারার লাউঞ্জে। গাড়ী আসবে নটায়। এরকম গাড়ি আসার প্রতীক্ষায় বসে আছেন আরো জনা পঁচিশেক লোক। বিভিন্ন ফ্যামিলির। এক ভদ্রমহিলাকে দেখা যাচ্ছে চুলে হর্স টেল। চোখে সানগ্লাস। উর্ধাঙ্গে ঝকঝকে সাদা গেঞ্জি। নিম্নাঙ্গে জিন্সের হাফ প্যান্ট অর্থাৎ শর্টস। মুখে ঘন ক্রীমের প্রলেপ। তবে হাত ও পায়ের ত্বক দেখে মনে হয় বয়স পঞ্চাশের ওপর।
এসব দেখে রাখাল বাবুর চোখ সয়ে গেলেও অন্য এক বয়স্কা মহিলা, পরনে শালোয়ার কামিজ, তিনি থাকতে না পেরে বললেন– এত সেজেছেন ছবি তোলাচ্ছেন না কেন ?
— মানে ?
— সঙ্গে কেউ এসেছেন না একা ?
— একা কেন হবে ? স্বামী এসেছেন।
— ওনাকে বলুন ছবি তুলতে।
— আমার যেমন খুশি আমি সাজবো, তাতে আপনার কি ?
স্ত্রীর উচ্চকন্ঠে ভীত হয়ে ছুটে এলেন স্বামী।
— কি হোলো আবার ?
এবার রাখাল বাবু বেরিয়ে এলেন বাইরে। তার আবার বাগবিতন্ডা সহ্য হয় না। হৃৎকম্প শুরু হয়। বাইরে এসে পায়চারি করতে লাগলেন। ওখানে সকলের মিলিত উপস্থিতিতে ও খুশির আবহে বিতন্ডা পরিনত হোলো আনন্দ আলোচনায়। উড়ে আসা কিছু মন্তব্যে তিনি বুঝতে পারলেন হাফ প্যান্ট পরা মাসীমা একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। পাঁচ বছর পরে রিটায়ার করবেন।
স্বামী অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মী। কাজ করতেন কোর্টে। মুহুরী। থাকেন সোদপুর ঘোলা। প্রশ্ন কর্ত্রী হালিশহর। চমকে উঠলেন রাখালবাবু। মনে পড়লো কাল রাত্রে তিনি যখন বুফেতে খাবার নিছিলেন, পাশ থেকে এই মুহুরী শ্যেন দৃষ্টিতে তার খাবার নেওয়া দেখছিলেন। তিনি অস্বস্তিতে বেশি খাবার নিতে পারেন নি।
যাক বাবা গাড়ি এসে গেল। ঘোলা আনন্দে হঠাৎ ভাঁটার টান। সবাই মিলে গাড়িতে উঠে বসলেন। গন্তব্য পোর্টব্লেয়ার।
[রাখালবাবুর ভ্রমণ বৃত্তান্ত – (পর্ব – ৫)]
হাফ প্যান্ট পরা হর্স টেলের মহিলা কে চাক্ষুষ যেন দেখতে পাচ্ছি! রাখাল বাবু মোবাইল এ ছবি তুলতে পারতেন, প্রকৃতির দৃশ্য সহ!