পর্ব – ৮

তারপর রাখালবাবু সপরিবার বারাতাং থেকে নাচতে নাচতে এলেন রঙ্গত রাত আটটা নাগাদ। রাস্তা এত খারাপ যে তার কোমর ধরে গেল আর গাড়িতে দুবার মাথা ঠুকে গেল। কোন রকমে হোটেলের ঘরে গিয়েই চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লেন এবং হাঁক পাড়লেন– হটপ্যাড লাও।
— কি বললে ? হট প্যান্ট ?
— কচুপোড়া ! হটপ্যাড, হটপ্যাড। কোমরে সেঁক দিতে হবে।
— এখানে হটপ্যাড পাবে কোথায় ? একি বাড়ি পেয়েছো নাকি ?
— তাহলে কাল দিগলীপুর নেহী যাউঙ্গা। অসম্ভব।


তিনি না গেলে গিন্নী যান কি করে ? অতঃপর তার মেয়ে জামাই আর নাতি আবার নাচতে নাচতে চললো দিগলীপুর। কেননা রাস্তা এখানেও খারাপ। আর তিনি সস্ত্রীক রয়ে গেলেন রঙ্গত। বিকেলে তারা কাছাকাছি মরিস ডেরা বিচ এবং আমকুঞ্জ বিচে গেলেন। একদম ফাঁকা , নির্জন। খুব ভালো লাগলো। মরিস ডেরায় তিনি একটি ডাব খেলেন। প্রচুর জল। পেট ভরে গেল। ডাবটিতে শাঁসও ছিল। ডাবওয়ালী ডাবটি কেটে দেখলেন তখনও কিছু জল ছিল। সেটি পড়ে গেল।
— ইস, আপনে পুরা ডাব খাইতে পারেন নাই। নেন শাঁস টুকু খান। আমি বরং আর একটি ডাব কাইট্যা দিই ,খান। এর লগে দাম দিতে হইব না।
আঁতকে উঠলেন রাখাল বাবু।
— না না, আর পেটে জায়গা নেই। আর খাবো না।
— আপনে পুরা ডাব খাইলেন না।


ডাবওয়ালী অনেক সংকোচে কুড়ি টাকা নিলেন। এরপর সন্ধ্যা বেলা রঙ্গতে তিনি আবার বের হলেন সান্ধ্যকালীন চা এর খোঁজে। এখানে ডাব চাইলেই পাবেন কিন্তু চা পাবেন না। অনেক খুঁজে একটি গাছের আড়ালে আধো অন্ধকারে একটি দোকান পেলেন যেখানে চা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কাপ দশ টাকা। রাখালগিন্নী নিলেন চিনি ছাড়া লিকার চা, এবং তিনি নিলেন চিনি সমেত দুধ চা। খাবার পর দাম দিলেন কুড়ি টাকা। কিন্তু প্রবীন দোকানী পাঁচ টাকা ফেরৎ দিলেন। কারন জিজ্ঞেস করতে বললেন– আপনার চা দশ টাকা। কিন্তু ওনার চায়ে আছেটা কি শুধু একটু জল আর চায়ের রস। এবং বলেই হেসে ফেললেন। রাখাল বাবু মোহিত হয়ে গেলেন তাঁকে আরো চমৎকৃত করলো ঐ হাসতে হাসতে বলা।


— বুঝলে গিন্নী, সত্যিই জীবনে কিছু দেখার বাকি ছিল।
— কিছু বললে ?
— নাঃ

[পর্ব – ৭]

[পরম্পরা ওয়েবজিন, সেপ্টেম্বর ২৪, সূচিপত্র- এখানে ক্লিক করুন]