একবুক সমুদ্র নিয়ে রাখাল বাবু ফিরলেন পোর্টব্লেয়ার। তাদের পুরোন আস্তানা ওয়েস্টার্ন পার্ক হোটেলে। চেনা জায়গা। তাঁর নাতি করিডরে ইয়ো ইয়ো খেলতে লাগলো, আর তিনি বসে রইলেন লাউঞ্জে, কেননা ওখানেই একটু ওয়াই ফাই পাওয়া যায়। একটু পরে এলেন তাঁদের ট্যুর অপারেটর অমূল্য বাবু।

–আচ্ছা অমূল্যবাবু, আপনি কি পোর্ট ব্লেয়ারেই থাকেন নাকি সিজনে এসে ব্যবসা করেন?
— আমি এখানেই থাকি। আমার জন্ম এখানেই।
— বলেন কি ! এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে কি করে এলেন?
— আমার পৈতৃক বাড়ি রঙ্গত। মিডল আন্দামান।
— আপনি কি জারোয়া?

বলে নিজেই হাসতে লাগলেন হা হা করে।
— না, আমি জারোয়া নই। আমার বাবা এখানে এসেছিলেন। আমাদের ভিটে পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৫১ সালে আমাদের পাঠানো হয় এখানে। আমি নিজে পোর্টব্লেয়ারে জায়গা কিনে বাড়ি, অফিস তৈরি করেছি। ভাবছি রঙ্গতেও একটা রিসর্ট খুলবো।
— বাঃ খুব ভালো। কাল তাহলে কখন গাড়ি আসবে?

— আপনারা পৌনে ছটায় রেডি হয়ে থাকবেন। গাড়ি আসবে ছটায়। প্রথমে বারাতাং, তারপর সেখান থেকে রঙ্গত। বারাতাং এ লাঞ্চ আপনাদের। একটা স্ট্যালাকমাইটের কেভ আছে ওখানে। ইছে হলে দেখতে পারেন। ওটা ট্যুর প্রোগ্রামে ধরা আছে। আর আছে মাড ভলকানো। যাই হোক, ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। চলি। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।

পরদিন যথারীতি চলে এলেন জিরকাতাং। আর এসেই জীবনের শ্রেষ্ঠ এক দৃশ্য দেখে ফেললেন। একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। হঠাৎই দেখলেন আকাশে রামধনু উঠেছে। পুরোটা। প্যানোরামিক ভিউ। পার্ফেক্ট হাফ সার্কেল। তার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স দিয়েও পুরোটাকে আনা গেল না। এমন দৃশ্য কোলকাতায় বিরল।

তাঁর মেয়ে জামাই নাতি চলে গেল কেভ দেখতে আর তিনি সস্ত্রীক বসে রইলেন জিরকাতাং এ । দশ মিনিট অন্তর বার্জ সার্ভিস। ওঁদের গাড়ির টার্ন এলো আধঘণ্টা বাদে। তারপর ওনারা পৌঁছলেন বারাতাং। আর পৌঁছেই দেখা পেয়ে গেলেন সেই হাফ প্যান্ট মাসীমার। সদলবলে বসে আছেন বিশ্রামাগারে। শুনতে পেলেন মাসীমার কন্ঠস্বর– ছ্যা ছ্যা ওটা মাড ভলকানো? কচুপোড়া ভলকানো। আধঘন্টা অন্তর অন্তর একটা বাবল।

নিমেষে সিদ্ধান্ত নিলেন রাখালবাবু , তিনি ঐ কচুপোড়া ভলকানো দেখে শক্তিক্ষয় করবেন না।

(পর্ব – ৬)

[পরম্পরা ওয়েবজিন, আগস্ট ২৪, সূচিপত্র]