মায়ের চিঠিটা অতনুকে একটু নাড়িয়ে দিল-বাবা নাকি পাল্টে গেছে- মা খুব বিচলিত।

ভোরে দমদমে নেমে একটা উবের ধরে সোজা উত্তরপাড়ার বাড়ি।

চায়ের কাপ হাতে মায়ের পাশে বসল। মা জানাল ক’দিন আগেই বাবা নাকি একটা বড় চোঙা লাগান বাক্স কুলির মাথায় চাপিয়ে এনে ঘরে ঢুকিয়েছে।আর তার পরেই শুরু এই ভুতুড়ে কাণ্ডের।

বাজারের থলে দুটো নামিয়ে,হাত ধুয়ে, ঘরের চাবি খুলে বাবা অতনুকে ডাকল।

অতনু ঘরে ঢুকে দেখল ঘরের কোণে টেবিলে একটা পুরনো দিনের ফোনোগ্রাফ যন্ত্র।

দরজার কাছে উঁকি না দিয়ে ঘরের ভেতর এসো — বাবা মাকে ডাকল।বাবা হাতে তুলে নিল একটা কালো রঙের গোল চাকতি,সেটি যন্ত্রের ওপর রেখে সুইচ টিপতেই আস্তে আস্তে চাকতিটা ঘুরতে শুরু করল। বাবা স্টাইলাসটা চাকতির বাইরের দিকে সাবধানে বসাল।… বিদায় অভিশাপ… রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর… কন্ঠে সুতনু বসু ও মাধুরী দত্ত। ছোটবেলায় শোনা বাবার কমবয়সের গলা বেজে উঠল কানে…
দেহো আজ্ঞা দেবযানী, দেবলোকে দাস করিবে প্রয়াণ।
রেকর্ড বেজে চলে, মা – ছেলে ভেসে চলে বিস্ময়ের সমুদ্রে।

মাঝে বাবা রেকর্ড উল্টে বসিয়েছে। শেষে আবার বাবার গলা…
আমি বর দিনু দেবী তুমি সুখী হবে
ভুলে যাবে সর্বগ্লানি বিপুল গৌরবে।

অনেকক্ষণ তিনজন চুপ। প্রায় চল্লিশ বছর আগের সুতনু বসুর এই পরিচয় মা – ব্যাটা দুজনের কেউই জানত না।

মা হাসিমুখে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বলে, তোমরা বসো, আনি চা নিয়ে আসছি।

[পরম্পরা ওয়েবজিন, আগস্ট ২৪, সূচিপত্র]

0 0 ভোট
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
পংক্তির ভেতর মন্তব্য
সব মন্তব্য
Syamali Bhadra
Syamali Bhadra
2 months ago

ভালো লাগল