বোলপুর এর এক সাধারণ ভাতের হোটেলের অসাধারণ স্বাদের গল্প এটা।
শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ধরার আগে হাতে একটু সময় থাকে। সকাল ১১.৩০টা, মেরেকেটে ১২টা, হোটেল থেকে দূর করি দিছে। দুপুরে খাবো কোথায়? স্টেশন রোডের বিরিয়ানির হাঁড়িও নামেনি তখন। প্ল্যাটফর্ম-এ ঢুকে হকার, কুলিদের জিজ্ঞেস করি, ‘খাবো কই?,
তখন সন্ধান পেলাম, ‘অজয়ের ভাতের হোটেল-এর। কিন্তু যেতে হবে সেই ২ং প্ল্যাটফর্ম এর শেষ মাথায়, লাইন পেরিয়ে। হ্যাঁচোড়,প্যাঁচোড় করতে করতে রেলপথ পেরোলাম। বাঁদিকে একটু গিয়েই দেখি, ভীষণ সাদামাটা ভাতের হোটেল। সামনে বড়, বড় উনুনে তখনও রান্না চলছে। ভেতরে পরিষ্কার টেবিল, বেঞ্চ। আমাদের দেখে অপেক্ষা করতে বললেন। এই হয়ে এল, একটু পরেই পাত পরবে। আমি দেওয়াল, বাসনকোসন, হাত ধোয়ার বেসিন-এর পরিচ্ছন্নতার চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত তখন। ৫০বছরের দোকান, থাকে, থাকে বাসন, পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি চারপাশ।১২টার আশেপাশেই দেখলাম মুহূর্তে ভরে গেল বেঞ্চগুলো, শিক্ষিত অফিসবাবু বা নিয়মিত মানুষজনে। খোশগল্প, আজকের মেনু কী, এরকম টুকটাক কথোপকথন কানে আসতে, আসতেই চলে এল ভাতের থালা।

ভাতের থালা


মেনু বলতে, ভাতের সাথে শাক ভাজা, আলু-উচ্ছে ভাজা, আলুচোখার একটি পিংপং বল, ডাল, আলুপোস্ত, ফুলকপি আলুর বাটি। কাঁচালংকা, পেঁয়াজ, শসা, পাঁপড় তো আছেই। সবচেয়ে চমক দুটো করে অনবদ্য পোস্তর বড়া। এরকম স্বাদ আগে পাইনি। তারপর এল পছন্দমত রুইপোস্ত, কারও পছন্দের মুরগীর লাল ঝোল। আর শেষ পাতে আমড়ার চাটনি। খুব ভালো পরিবেশন, আর ব্যবহার এতই ভালো, মনে হল যেন কতদিনের পরিচিত। সবচেয়ে কাজের কথা অত্যন্ত ন্যায্যমূল্য। ওই এক পেট খেয়ে কচ্ছপের গতিতে শান্তি এক্সপ্রেসে পুরো তলিয়ে গেলাম। বেঁচে থাক এমন পকেট সহায় ভাতের হোটেলগুলো, ক্যাফে, রেস্তোরাঁর চাকচিক্যকে ৫ গোলে হারিয়ে দেবে এইসব হোটেলের খাবারের মান।


বলে রাখি এটা কোনো প্রমোশনাল পোস্ট নয়, অজয়ের হোটেলের প্রমোশন লাগে না।

[লেখকের অন্য লেখা]

ছবিঃ ডা. স্ববর্ণা চক্রবর্তী

[পরম্পরা ওয়েবজিন, মে ২৪, সূচিপত্র]