
ট্রেনের খাওয়া
আমার সাইড লোয়ার, উলটোদিকের লোক টি মাংকি ক্যাপ, আর আমি দরদর করে ঘামছি। সামনের লোকটির টাইট জামাকাপড়ে ফাটোফাটো অবস্থা। পাশ থেকে বাচ্চাদের চ্যাঁ ভ্যায়ে রেলগাড়ি শোরগোল। এক প্রশস্ত মা ও ততধিক প্রশস্ত ছেলের এইটুকু সময়ের মধ্যে ডিম,পাউরুটি, কেক, কতকিছু খাওয়া হয়ে গেল। আর আমার ওদের দেখতে গিয়ে পেটে গরম চা পরলো, আর ডিমসেদ্ধ ওয়ালা আমার সিটের পাশে খুলে রাখা চটি-টা যত্ন করে সিটের তলায় ঢুকিয়ে বললো, “পায়ে,পায়ে চলে যাবে”। মশাগ্রামে একটু আস্তে দুলুনি দিয়ে কি থামার চেষ্টা করছে? লোকজনের কী এত খাওয়া রে? খেয়েই যাচ্ছে।কৌটোর ঢাকনায় মুড়ি, ব্যাগের চাপে গুড়ো কেক, পুরি সবজি, মুড়ি মাখা, ডিমসেদ্ধ, আর পাশ দিয়ে ফিসফিসিয়ে হেঁকে যাওয়া নাস্তা, নাস্তা। আর এখানেও কে যেন স্পিকারে চালিয়েছে, “সঙ্গীইইইইইইই, অমর সোঙ্গ ইইইইইই”! এবার কমলালেবুর গন্ধ আসছে, তার সাথে পানের ডিবে খুলে গোপাল ১২০ দিয়ে পান সাজা হয়ে গেল, আর হ্যাংলারা একটু সুপুরি চেয়ে নিল। আরে! সুপুরিও ছাড়বে না? এবার আবার শুরু হলো আপার বাংক থেকে, ‘আর কতকাল একা থাকবো???’

বর্ধমান জং। এবার চালভাজা, বাদাম, চিপস, বিমল গুটখা… ওস্তাদ অনেক অফিসযাত্রী উঠেই বাপের জমিদারির মত হাবভাব শুরু করে দিল, আর পাশ দিয়ে হেঁটে গেল শোনপাপড়ি, (বাড়ির জন্যে নিতে বলছে), ব্রেড বাটার, লেবু লজেন্স, মুগডাল, বাসমতী চালভাজা, চিড়ে বাদাম… আর সাথে, “ইয়াদ আ রহা হ্যায় এএএএএ তেরা প্যায়ার….”, মাগো!
এবার শিঙাড়া সাথে কাঁচালংকা ফ্রি, আর এবার “জুবি,জুবি জুবি…” সামনের ফাটোফাটো মশাইকে সাইড করে পেছন ঠেকিয়েছে এক নিত্যযাত্রী, তার মধ্যেই শিঙারায় আলতো কামড়, ছাড়াছাড়ি নেই।
যাক, এবার একটু চাপ কম। হেডফোন, জুতোপালিশ, ব্যাগের চেন, তালা একটু খাওয়ার বিরতি মনে হচ্ছে। বক্স দাদা পাড়ার প্যান্ডেলের চিপ-টা বাজিয়েই চলেছেন… কী যন্ত্রণা! ব্যাগ সারানো চলছে, আমার ব্যাগওয়ালা ত ঝুলিয়ে রাখে ৭দিন। দেখো কেমন চটজলদি সারানো হয়ে গেল। এবার থেকে ট্রেনে উঠবো ছেঁড়া ব্যাগ নিয়ে। ঝটপট কাজ হবে।
ঠিক জানি, এরপর কী গান শুরু হবে… এবং তাই হলো, “সাত সমুন্দর পার সে তেরে পিছে, পিছে” এবার পুরো নিশ্চিত, প্যান্ডেলের প্লে লিস্ট নিয়েই উঠেছেন বক্স দাদা।

এবার বাড়ি থেকে আনা টিফিনকৌটো খুলে ছোটদের খাওয়া শুরু হল। বড়রা আরেক প্রস্থ চা, কফি। মিনমিন করে নীল জামা পরে হাতে কাগজ, পেন নিয়ে চলে এসেছে, “খানা,খানা”। এত খাওয়ার বহর দেখে আমার খিদে মরে গেছে।দুপাশের ফাঁকা মাঠেঘাটে বউ মেয়েদের ভিড়, নরম রোদে যতটা জমিতে কাজ করা যায়। এবার আমি নামবো, আর বক্স দাদার গান বাজছে “মঙ্গলদীপ জ্বেলে…”
ছবিঃ ডা. স্ববর্ণা চক্রবর্তী
খুব মজা পেলাম। হাঁসির গল্প আরো লিখুন।
আপনার এই ধরনের লেখার এলেম আছে!
অভিনন্দন!
খুব মজা পেলাম। হাঁসির গল্প আরো লিখুন।
আপনার এই ধরনের লেখার এলেম আছে!
অভিনন্দন!