বরাহনগরের অলিগলি
গতবছর দুই ইতিহাসের ছাত্রের সাথে এক শনিবার বিকেলে ঘামতে ঘামতে হাঁটতে বেরোই আমার পাশের পাড়া বরানগরের অলিগলিতে। ইতিহাস বুকে করে এই প্রাচীন জনপদ গঙ্গার তীর ধরে এক ক্ষয়িষ্ণু অঞ্চল এখন।
বরাহ নগর নামের উৎপত্তির ইতিহাস
বরানগর বা বরাহনগর, যে নামেই ডাকা হোক এর সাথে শুয়োরের কোনো সম্পর্ক নেই। বরাহ কথাটার উচ্চারণ হতো বরাঃ বলে। এই জায়গার নামের ইতিহাসের পেছনে ২টি ব্যাখ্যা আছে।
১) প্রায় ৪০০ বছর আগে এই জায়গা ছিল জঙ্গলময়। নানা প্রাণীর সাথে প্রচুর ময়ূর ছিল। স্থানীয় লোকেরা সেই ময়ূরদের পেখম বিক্রি শুরু করল, যার খ্যাতি আস্তে আস্তে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। দূরদূরান্ত থেকে লোকে হুগলী নদী হয়ে এখানে আসত ময়ূরের পেখম কিনতে। ময়ূরপুচ্ছের এক প্রাচীন নাম ছিল বরহা। সেই বরহার বিক্রির অর্থেই গড়ে উঠতে লাগল এক সমৃদ্ধ জনপদ যার নাম হল বরহানগর, যা ক্রমশ অপভ্রংশ হয়ে বরাহনগর হয়ে বরানগরে এসেছে।
২) সেই নগর গড়ে ওঠার পেছনে আরেকটা জিনিসের খ্যাতি ছিল, তা হল হলুদ। জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপনের ফলে ময়ূরেরা পালিয়ে গেল, মানুষ এল। পাশের হুগলী নদীর দৌলতে বাণিজ্য বাড়তে লাগল। নৌকোয় করে দূরদূরান্ত থেকে বস্তা বস্তা হলুদ আসতে লাগলো এখানে আড়তে। তৎকালীন কলকাতা থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে হলুদ কিনে নিয়ে যেতেন বিক্রির জন্য। হলুদের এক প্রাচীন নাম ছিল বরা। সেই হলুদ অর্থাৎ বরা বিক্রিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে বরানগর। দুটোই শুনতে অবিশ্বাস্য লাগছে জানি, কিন্তু এটাই বাস্তব।
এত সমৃদ্ধ ইতিহাস, আর এত গল্প যে, “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,, জানতামই না।একপর্বে ছবি আর গল্প হবে না।কিছুটা এখন দিলাম।বেশি বকবকানি আর বক্তিমে ছাড়া একদম ছবিতে, গল্পে এগোই।
[এর পরের পর্বে আরো অনেক ভুলে যাওয়া ইতিহাস অপেক্ষায় রইলো]
[পরম্পরা ওয়েবজিন, সেপ্টেম্বর ২৪, সূচিপত্র – এখানে ক্লিক করুন]