(পর্ব – ৪)

নর্থ বে আইল্যান্ড থেকে ফেরার সময় সে এক কেলেঙ্কারিয়াস ব্যাপার হোল। সময়ের ব্যাপারে রাখাল বাবু একজন বাতিকগ্রস্ত লোক। কাঁটায় কাঁটায় দুটোর সময় তিনি নাতির হাত ধরে ক্রুজে উঠে বসেছেন।

পিছন পিছন ওরা তিনজন পা টেনে টেনে আসছে। যেন আসতে আর ইচ্ছে করছে না। আসতে আসতে রাখাল গিন্নীর ইচ্ছে হোল ছবি তোলার। ছবি তুলছেন তো তুলছেনই। আর এদিকে জাহাজ দিলো ছেড়ে। অ্যাই রোককে রোককে। রাখালবাবু চেন টানতে গিয়ে দেখলেন চেন নেই।

নাতি এই বুঝি কেঁদে ফেলে। সারেং এসে শেষে অভয় দিলো আমরা আবার সেকেন্ড ট্রিপ করবো। আপনি ওয়াপস ফিরে পাবেন আপনার মিসেশ কে। সেকেন্ড ট্রিপ!! তার মানে পাঁচটা বেজে যাবে ওদের আসতে। ঝাড়া তিন ঘন্টা তিনি অ্যাবার্ডিন জেটিতে বসে রইলেন নাতির হাত ধরে। অবশেষে তেনারা এলেন যেন কিছুই হয়নি। উত্তেজনায় হিন্দী বেরিয়ে এলো রাখাল বাবুর। আরে থোড়া পা চালাকে এসো। হামারা ডেরাইভার যদি ভাগ যাতা তো ক্যা হোগা ? তার নাতি খিলখিল করে হেসে উঠলো।


পরদিন পোর্টব্লেয়ারের হোটেলেও হিন্দী নিয়ে বেশ মজা হোল। আটটায় চেক আউট করে ব্রেকফাস্টে লুচি ঘুগ্নি খেয়ে লাউঞ্জে বসে আছেন। এগারোটায় গাড়ি আসবে। কেননা সাড়ে বারোটায় গ্রীন ওসান জাহাজ ছাড়বে বন্দর থেকে। আশেপাশে আরো অনেকে বসে আছেন। সবাই হিন্দীতে কথা বলছেন। এমনকি ম্যানেজারও। হঠাৎ একটি বাচ্ছা ছুটতে গিয়ে দড়াম করে পড়ে গেল। বাচ্ছাটি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। তার মা যিনি এতক্ষন বাচ্ছাটির সংগে হিংরাজিতে ( হিন্দী+ইংরাজি) কথা বলছিলেন, তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন- কেন যে দৌড়তে যাও বুঝি না। এবার হোল তো ?


ম্যানেজারও বলে উঠলেন- আহা বাচ্ছা কে বকবেন না। ও কি সব বোঝে ? যা ব্বাবা সবাই বাঙালী ? রাখাল বাবু ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলেন – আপনি বাঙালী ?
–হ্যাঁ।
–কোথায় বাড়ি আপনার ?
–রানাঘাট।
–এখানে ? বিজনেস ?
–হ্যাঁ।
গাড়ি এসে গেল। সবাই উঠে পড়লেন। তারপর গ্রীন ওসানে চেপে বসলেন। শুরু হোল ডি জে সহকারে মিউজিক। হাফ প্যান্ট পরা সবাই নাচতে লাগলেন। আবালবৃদ্ধবনিতা।


বিস্মিত রাখাল বাবু পাশে গিন্নীকে বললেন এ কোথায় চলেছি আমরা ?
গিন্নী বললেন হ্যাভলক।

(পর্ব – ৩)

[পরম্পরা ওয়েবজিন, মে ২৪, সূচিপত্র]