বেড খালি
গিজগিজ করছে রোগীদের ভিড়! এই নিয়ে গত পনেরদিন
হলো সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটে অব্দি হত্যে দেওয়া! হাতের কার্ড টা ক্যান্সার হাসপাতালে জমা দিয়ে, মেঝেতে দেওয়াল ঘেঁসে বসলো সুরমা। মাসে মাসের শরীর খারাপ বন্ধ হয়ে গেছে দশ বছর আগে। এই চুয়ান্ন বছর বয়সে এসে আবার টাটকা রক্ত পড়ছে যখন তখন।
ডোমজুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখে বললো, মনে হচ্ছে ক্যান্সার!
হাজরার কাছে গর্মেন্ট ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে দেখাতে বললো। সেখানে বড় ছেলে নিয়ে এসেছিল, ঠিক ক্যান্সার হয়েছে জরায়ু মুখে!
ভর্তি হতে হবে, কিন্তু বেড নেই!
রোজ এসে কার্ড জমা দিতে হবে, যেদিন বেড হবে সেদিন ভর্তি নেবে। বড় ছেলে স্কুল মাস্টার, তাও দশ দিন মাকে ধরে ধরে নিয়ে এসেছে। বেড নেই! ছোট ছেলে গুজরাটে কারখানায় কাজ করে, ছুটি পাবে না! তা ছাড়া বউ, ছেলেকে একা রেখে কি করে আসবে। তাই বড় ছেলে একটা লোক ঠিক করে দিয়েছে, সেই সুরমা কে নিয়ে আসছে। কিন্তু কপাল, সেই ছেলেটি পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছে, আসতে পারেনি। কিন্তু ওখানে বলেছিল, আজ বেড হয়ত বেড খালি হবে!
আসতে আসতে তাই সুরমা নিজেই মনের জোরে এখানে চলে এসেছে একা! আজ মাথা খুব ঘুরছে। কার্ড জমা দিয়ে কোনরকমে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে মেঝে তে বসলো।
খুব হাত কাঁপছে, মাথা টলে যাচ্ছে। ঝোলা থেকে জলের বোতল বের করে খানিক জল খেল। কদিন ধরে খুব রক্ত পড়ছে! কত রক্ত আছে কি জানি!! দেওয়ালে ঠেস দিয়ে খুব ঘুম আসতে লাগলো।
প্রায় তিনটে নাগাদ ডাক আসলো “সুরমা আছেন? সুরমা হাজরা? আপনার বেড হয়েছে, চলে আসুন।”
ক্রমে সব রোগী চলে গেছে। জমাদার মেঝে পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখে এক বুড়ি দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমোচ্ছে।
“ও বুড়ি মা ওঠো, ওঠো” সাড়া না পেয়ে হাত দিয়ে ঠেলতে দুম করে মাটিতে গড়িয়ে পড়লো সুরমা!
অন্য কোন জায়গার বেড খালি পেয়ে, চলে গেছে!!
মর্মস্পর্শী বাস্তব ঘটনা মনে দাগ রেখে যায়।
মন ছুঁয়ে গেল ।