পিআইজি
সকালবেলায় কোয়ার্টারের পেছনের খোলা জায়গাটায় ব্যাডমিন্টন খেলাটা এখন নেশার মতো হয়ে গিয়েছে দীপুর।
আসানসোলের এই রেলের কোয়ার্টারটায় তার বাবার বদলি হয়ে আসার আগে যারা ছিল তারাই বোধ হয় এই ব্যাডমিন্টন কোর্টটা তৈরি করেছিলো।
নতুন বাড়িতে এসে দীপু, মানে দীপঙ্কর আর তার দুই বোন, অদিতি আর দিতি, মানে মুণটি আর ঘুণ্টি, কোর্ট দেখে বেজায় খুশী…বলতে গেলে এ তো একেবারে পারসোনাল কোর্ট !
চতুর্থ সঙ্গী জুটতে বেশী দেরি হয়নি।
পাশের কোয়ার্টারের অলোক, দীপুর কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের সহপাঠী ।
সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে ঘণ্টাখানেক খেলে গা ঘামিয়ে নেওয়াটা তাদের এখন রুটিন হয়ে গেছে।
পুজো কেটে গিয়ে কালীপূজোর আর বেশী দেরি নেই ।
আজকাল আবার রোদ উঠে গেলে এলোমেলো হাওয়া দিচ্ছে।
সে হাওয়ায় ঠিকমতো খেলা যায় না, পালকের কর্ক কেবলই উড়ে উড়ে অন্যদিকে চলে যায়।
আজকের খেলাটা তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে দিয়ে তিন ভাইবোনে বাড়িতে ঢুকে দেখলো রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে মা কথা বলছে নীচের উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মহিলার সঙ্গে।
বছর তিরিশ বয়েস হবে মহিলার, পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা আট-নয় বছরের মেয়ে, তার মাথার তেলহীন রুক্ষ চুলে দুটো বিনুনি।
ব্যাপারটা কি চলছে দীপুর বুঝতে দেরী হলো না। কদিন ধরে প্রায় রোজই মা কাজের লোকের ইন্টারভিউ চালাচ্ছে, পছন্দসই কাউকে আর পাচ্ছে না।
আঠারো বছরের দীপুর কোন ইন্টারেস্ট নেই এসব ব্যাপারে। তাই এক ঝলক সেদিকে তাকিয়ে দীপু ভেতরে চলে গেলো।
কৌতূহলী হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো তার পিঠোপিঠি দুই বোন। পাঁচ মিনিটও যায়নি দুজনেই দৌড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে প্রায় একসঙ্গেই বলে উঠলো, ফাইনাল হয়ে গেলো দাদা!
বড়ো বোন মুণটি বললো, মা ঠিক করে ফেলেছে!
দীপু মন দিয়ে কলেজের ব্যাগ গোছাচ্ছিল, টেবিল থেকে কয়েকটা নোটবুক তুলে নিয়ে ব্যাগে রাখতে রাখতে মুখ তুলে বললো, কি হয়েছে, কি ঠিক করে ফেলেছে রে মা?
- ওই বৌ-টা এখন থেকে আমাদের বাড়ি কাজ করবে, দুবেলা থাকবে। মুণটি বললো।
ওর কথা শেষ হতে না হতেই ঘুণ্টি এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো, আর ওই যে ছোট মেয়েটা, রেণু, ও আমাদের বাড়িতেই থাকবে সারাদিন। মা-র সঙ্গে রাতে ফিরে যাবে।
দীপু এবার বেশ অবাক হলো…’ওই বাচ্চা মেয়েটা সারাদিন থাকবে…কাজ করবে না কি…চাইল্ড লেবার!’ মুখে বললো, মা রাজি হয়ে গেলো ?
বড়ো বোন বললো, না না, ও কোন কাজ করবে না, শুধু থাকবে। ওই রেণুর মা, কমলা, খুব করে মা-কে বললো যে। সত্যিই তো ! মা এখানে কাজ করতে এলে বাড়িতে একা মেয়েটা কেমন করে থাকবে বল দাদা ! শুনলাম তো, ওদের বাবা নেই, মদ খেয়ে খেয়ে মরে গেছে। - মেয়েটার পড়াশোনায় নাকি খুব মাথা। কষ্ট করেও ওর লেখাপড়া চালাতে চায় ওর মা। এ বাড়িতে থাকলে আমরাও নাকি ওকে পড়াতে হেল্প করতে পারবো। চোখ গোল গোল করে ঘুণ্টি যোগ করলো।
- বাঃ! মেয়ের পড়ায় মাথা আর মায়ের প্র্যাকটিক্যাল বুদ্ধি! বলে দীপু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
ঘটনা পরম্পরায় অবশ্য মুণটি ঘুণ্টি বেশ উল্লসিত…রেণু তাদের কাছে পড়ুক বা না পড়ুক, ওদের খেলার একটা সাথী তো হলো!
২
কয়েক দিনেই বোঝা গেলো ওই রেণুর মা কমলা কিছু বাড়িয়ে বলেনি।
পড়াশোনায় রেণুর আগ্রহ নিশ্চয় ভালোই।
কারণ দ্বিতীয় দিনের সকালেই শরীরের তুলনায় অনেক বড়ো সাইজের বইয়ের ব্যাগ পিঠে নিয়ে রেণু এসে উপস্থিত হলো। হাতের জামাকাপড়ের পুঁটলিটা সেই তুলনায় অকিঞ্চিৎকর বলা যায়।
সরকারি প্রাইমারি স্কুলে বইয়ের এতো চাপ দেখে দীপু আশ্চর্য হলো।
আরও আশ্চর্য হলো যখন দেখলো রেণুর ব্যাগের অনেক বই-ই ক্লাস টু-এর সিলেবাসের বাইরে ! জানা গেলো সেসব ছবিতে পঞ্চতন্ত্র, আরব্যরজনী আর ঈশপের গল্পের মতো বই নাকি ওর স্কুলের একজন ম্যাম কিনে দিয়েছেন, পড়ায় ওর আগ্রহ দেখে।
দীপুর দুই বোন বইয়ের সম্ভার দেখে বিচলিত না হয়ে রেণুকে তক্ষুণি ব্যাডমিন্টন আর এক্কা-দোক্কা খেলার খুঁটিনাটি বোঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আর সেদিন রাতে দীপু লক্ষ্য করলো রেণুর খাওয়ার বহর!
ভাতটা হয়তো একটু বেশী-ই খায় মেয়েটা! তা বলে গরীব মেয়েটাকে পিআইজি বলে ডাকতে হবে!
রেণু এ বাড়িতে আসার দ্বিতীয় দিনেই দীপু দুই বোনের কাছে রেণুর এই ডাক নাম ঘোষণা করার পর দিতি অদিতি দুজনেই প্রবল আপত্তি করলো।
- দাদা, তুই অত্যন্ত মিন আর রুড ! অদিতি দারুণ রাগতস্বরে বললো।
- ঠিক তাই ! আহা রে ! বাবা নেই…ওরা কি রোজ ভালো করে খেতে পায় না কি ! দিতি যোগ দিলো।
- আরে আমরা ওকে যদি পিআইজি বলে ডাকি, ও কিছু বুঝবে না কি ! আমি এক্ষুণি তোদের দেখিয়ে দিচ্ছি । রেণু…রেণু…। উঁচুগলায় ডেকে উঠলো দীপু ।
কোথায় ছিল মেয়েটা, দৌড়ে এসে বললো, আমাকে ডাকছো দাদা ? - শোন, আজ থেকে আমরা তিনজন তোকে রেণু বলে ডাকবো না, পিআইজি বলে ডাকবো, ঠিক আছে ? সকলের সামনে নয়…এই যখন আমরা চারজন একসঙ্গে থাকবো তখন, বুঝলি ?
রেণু সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে বললো, ইংরেজি নাম দিচ্ছো আমার ?
অদিতি আর দিতি চোখাচোখি করে দীপুর দিকে তাকালো। - হ্যাঁ তো। তবে এই নাম আবার বদলেও যেতে পারে। সে আমরা দেখবো পরে । তুই এখন যা… বিকেলবেলায় মুণটি দিদি তোকে পড়াবে।
দীপু দুই বোনের দিকে একবার তাকিয়ে মিচকি হেসে বললো।
যেমন ভাবে এসেছিলো সেই রকম দৌড়ে চলে গেলো মেয়েটা। - দাদা, খুব খারাপ করলি এটা। তুই যা-ই বলিস না কেন, আমরা দুজনে কিন্তু রেণুকে পিআইজি বলে ডাকবো না। আর আমি ওকে খুব মন দিয়ে পড়াবো, দেখে নিস।
অদিতি এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে দিতিও ঘাড় নাড়লো। - আরে এটা তো মজা করার জন্য কেবল…মা বাপিকে আবার বলে দিস না যেন।
৩
দিন দশেকের মধ্যেই মুণটি বাড়িতে জানালো তার ছাত্রী বেশ মেধাবী, পড়াশোনায় খুব মন তার এবং কোন বিষয় একবার বুঝিয়ে দিলে আর দ্বিতীয় বার তাকে বলতে হয় না।
বিশেষ করে ছবির গল্পের বই সে খুব ভালোবাসে।
শুনে দীপুর মা খুশী হয়ে স্বামীকে দিয়ে রেণুর জন্য ছবিতে রামায়ণ মহাভারতের বই আনিয়ে দিলেন।
অদিতির তত্ত্বাবধানে লেখাপড়া আর বাড়ির কর্ত্রীর সদাশয়ে সমধিক খাওয়াদাওয়া, রেণুর দুই কাজ-ই জোরদার চলতে লাগলো।
এর মধ্যেই দীপু অবশ্য বাবা-মার আড়ালে ওর পিআইজি ডাক নামটা চালু রেখেছে তবে দুই বোনের লাগাতার বিরোধিতায় সে ডাকের ধার অনেক কম।
তিন মাস পরে রেণুর সরকারি স্কুলের অ্যানুয়াল পরীক্ষা হয়ে গেলো।
ক্লাসের সত্তর জনের মধ্যে থার্ড হয়ে রেণু ক্লাস টু থেকে থ্রি-তে উঠলো।
ছাত্রীগরবে গর্বিতা হয়ে অদিতি হাতে রেণুর মার্কশিট নিয়ে বাড়িময় উজ্জ্বলমুখে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, তার ভাবখানা…’দ্যাখো ঠিক বলেছিলাম কিনা !’
আর কমলা বার বার বলতে লাগলো এই বাড়িতে থাকতে পাওয়াটা রেণুর কাছে ভগবানের আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
কিন্তু জগতের দুঃখজনক নিয়ম এই যে ভাল দিনগুলো কখনো চিরস্থায়ী হয় না।
আর দুর্ভাগ্যক্রমে সেই নিয়মটা এবার খাটলো বেচারি কমলা আর রেণুর জীবনে।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দীপুর বাবার এক ধাপ প্রমোশনের সঙ্গে কোলকাতার হেড কোয়ার্টারে ট্রান্সফারের অর্ডার এসে গেলো।
মহানগর কোলকাতা তার সঙ্গে হেডকোয়ার্টারে প্রমোশনাল পোস্টিং!
আরও ভালো দিনের খোঁজে তড়িঘড়ি দীপুর বাবা আসানসোলের বাস উঠিয়ে সপরিবারে কোলকাতায় যাবার তোড়জোড় করতে লাগলেন।
চলে যাবার দিন দীপুর মার পা ছুঁয়ে প্রণাম করার পর অনেকক্ষণ ধরে চোখ মুছলো কমলা।
আর হতবাক রেণুর চোখমুখ দেখে মনে হলো এই বাড়ি ছেড়ে তার চলে যাবার গুরুত্বটা ও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।
এমন কি অদিতি আর দিতি যখন ওর হাতে নতুন জামাকাপড়ের প্যাকেটটা ধরিয়ে দিলো তখনও ও কেমন যেন নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
আর এই প্রথমবার দীপু আড়ালে রেণুকে পিআইজি বলে না ডেকে ওর হাতে হাতখরচের টাকা থেকে বাঁচানো পাঁচশো টাকা দিয়ে বললো, রেণু, পড়াশোনাটা চালিয়ে যাস, ছাড়িস না যেন।
৪
‘পঞ্চায়েত ভবন’-এ এতো লোকের সমাবেশ হতে পারে সেটা অধ্যাপক দীপঙ্কর চ্যাটারজি ভাবতে পারেননি । কলেজে ছাত্রদের দৈনন্দিন ভিড় আর কিছুটা বাঁধন-ছাড়া কলরব দেখে তিনি অভ্যস্ত।
কিন্তু এই সরকারি বিল্ডিংয়ে এতো কেজো আর মতলবী মানুষের ভিড়ে তিনি এখন একটু দিশেহারা বোধ করছেন।
‘নীচে উর্দিপরা পিওনটা তো বললো দোতলায় উঠে দুশ সাতাশ নম্বর ঘরের অফিসে আপনার কাজটা হবে। যদি তিন হপ্তা আগে কাউন্টারে সব পেপার জমা করে থাকেন তাহলে এতোদিনে আপনার ফাইল তৈরি হয়ে দুশ সাতাশে পৌঁছে গেছে । সাহেব ওখান থেকেই অর্ডার দেবেন। কিন্তু এ তো দেখছি পরের পর অফিসঘর…দুশ এক থেকে শুরু হয়েছে…’
দীপঙ্কর দোতলার লম্বা করিডর দিয়ে অফিসের দরজার নম্বর দেখতে দেখতে চলতে থাকলেন।
দুশ পনেরোর পর করিডর আবার ডানদিকে ঘুরে গেলো।
স্বস্তির বিষয় লোকের ভিড়টা এখানে বেশ কম ।
সম্ভবত সিনিয়র অফিসারদের এলাকা এটা, শেষ পর্যায়ের কাজকর্ম এখানে হয়, দীপঙ্কর ভাবলেন।
দুশ সাতাশ নম্বর ঘরের সামনে এসে তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।
দরজার বাইরে কোন লোক বসে নেই, অন্যান্য অফিস ঘরের মতো গতানুগতিক বেঞ্চিটাও নেই ।
দীপঙ্কর বুঝতে পারলেন এটা তাহলে পাবলিক ডিলিং অফিস নয়।
দরজার পাশে কাঠের বোর্ডে ব্রাউন রঙের ওপরে সাদা রঙ দিয়ে লেখা আছে ‘রাজস্ব কর মূল্যায়ন বিভাগ’ – জোন – দুই ।
একটু ইতস্তত করে ডোরক্লোজারের ধাক্কা সামলে দীপঙ্কর ভেতরে ঢুকে পড়লেন।
একটা মাঝারি সাইজের লম্বাটে ঘর, দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসান দেওয়া আলমারির সারি, গোটা আটেক টেবিলে লোকেরা ঘাড় নামিয়ে কাজ করছে।
তিনি ঢুকতে কয়েকজন মাথা তুলে তাকালো।
হলের এককোণে একটা বড়ো কিউবিক্যালের মতো, তার দরজা বন্ধ।
বাইরে একটা টুলে একজন বসে, সম্ভবত ভেতরের সাহেবের পিওন।
দীপঙ্কর ভাবলেন একেবারে খোদ ডেপুটি সেক্রেটারির কাছে যাওয়াটাই শ্রেয়, অধ্যাপক হিসাবে এইটুকু সুবিধা তিনি প্রায় সর্বত্রই ভোগ করে থাকেন।
তিনি পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বার করে সোজা গিয়ে টুলে-বসা লোকটার হাতে দিয়ে বললেন, ভেতরে গিয়ে সাহেবকে দাও, গিয়ে বলো আমি তিন-চার মিনিটের জন্যে দেখা করতে চাই।
লোকটা কার্ডটা হাতে নিয়ে একবার দেখলো তারপর হাত তুলে দীপঙ্করকে একটা খালি চেয়ার দেখিয়ে বসতে ইঙ্গিত করে বললো, সাহেব নয়, হালদার ম্যাডাম ! আপনি বসুন। আমি দিচ্ছি।
দীপঙ্কর বসে পড়লেন।
এক মিনিটের মধ্যেই লোকটা বেরিয়ে এসে দীপঙ্করকে বললো, আপনি ভেতরে যান।
দীপঙ্কর ভেতরে ঢুকে নমস্কারের ভঙ্গি করে বলতে গেলেন, ম্যাডাম আমি দুমিনিট আপনার সঙ্গে… তাঁর কথার মধ্যেই ডেপুটি সেক্রেটারি ম্যাডাম চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
তারপর ঘরের কোণায় রাখা সোফাসেটের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আপনি ওখানে বসুন, আমি এক মিনিট আপনার ফাইলটা দেখে নিয়ে জয়েন করছি।
দীপঙ্কর সোফায় বসে এদিক ওদিক দেখছেন, প্রশস্ত সেক্রেটারিয়েট টেবিলের দুপাশে অনেক ফাইল, কলমদান, দেওয়ালে সরকারি ক্যালেন্ডার, বড়ো একটা ওয়ালক্লক, জানলার ধাপিতে রাখা মানিপ্ল্যান্ট।
টেবিলের ওপরে কলমদানের পাশে রাখা আছে অফিসারের নাম-লেখা একটা কাঠের ফলক, সোফা থেকে কেবল শেষের ডব্লিউবিসিএস লেখাটা দেখা যাচ্ছে ।
দীপঙ্করের মনে পড়লো, কিউবিক্যালের বাইরে বসে থাকা পিওন বলেছিলো ইনি হালদার ম্যাডাম।
ইতিমধ্যে সেই লোকটা এসে সেন্টার টেবিলটায় দু কাপ চা আর প্লেটে বিস্কুট রেখে একটা চায়ের কাপে ঢাকা দিয়ে চলে গেলো।
দীপঙ্কর একটু অবাক হলেন, ব্যস্ত সরকারি অফিসারের থেকে এতোটা আতিথেয়তা আশা করেননি। সম্ভবত প্রফেসারের ভিজিটিং কার্ডের জোর, ভাবলেন তিনি।
কয়েক মুহূর্ত পরেই ইন্টারকমে কাউকে কিছু একটা বলে হালদার ম্যাডাম হাতে দীপঙ্করের ভিজিটিং কার্ডটা নিয়ে এসে বসলেন সিঙ্গল সোফাটায়, বললেন, চা নিন। আপনার প্রপার্টি ইভ্যালুয়েশনের সব পেপার তো ঠিকঠাক আছে, অ্যাপ্রুভ হয়ে গেছে। অর্ডারটা বাইরে হেডক্লার্ক জীবনবাবুর কাছ থেকে…
কথায় বাধা পড়লো । একজন প্রৌঢ় মানুষ ঢুকলেন ঘরে।
- জীবনবাবু, ডঃ দীপঙ্কর চ্যাটারজির ফাইলটা টেবিলে আছে, সই করে দিয়েছি। আপনি অর্ডারটা করে দিন। উনি হাতে হাতে আপনার কাছ থেকে এখনই নিয়ে যাবেন।
ডেপুটি সেক্রেটারি ম্যাডাম একথা বলতেই ভদ্রলোক ঘাড় নেড়ে টেবিলের ওপর থেকে একটা ফাইল তুলে নিয়ে দ্রুত চলে গেলেন।
হালদারের হাতে দীপঙ্করের কার্ড, দেখতে দেখতে বললেন, - আপনি এখন প্রফেসর, এইচওডি, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট, বহরমপুর কলেজ ! হবেই তো, পড়াশোনায় আপনি তো বেশ ভালো ছিলেন। আপনার বাবা মা…কেমন আছেন তাঁরা ?
দীপঙ্কর বেশ অবাক হলেন, তবু বললেন, তাঁরা নেই । বাবা চলে গেছেন তাঁর রিটায়ারমেনটের তিনবছর পরে, মা গতবছর। কিন্তু মিস হালদার, আপনি কি করে…মানে আপনি কি আমাকে…
হালদার ম্যাডাম হাসলেন। তারপর হাসিমুখেই বললেন, মিস হালদার নয়…আপনি আমাকে আপনার দেওয়া পুরনো পিআইজি নামেই ডাকতে পারেন !
দীপঙ্কর স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
কান লাল-করা হতবাক মুখে তাঁর চোখ চলে গেলো টেবিলের সামনে রাখা নামের ফলকটার দিকে।
ঘাড়টা একটু ঝুঁকিয়ে প্রফেসর চ্যাটারজি দেখতে পেলেন লেখা আছে ‘রেণুকা হালদার ডব্লিউবিসিএস’।
দারুণ লাগলো পড়ে গল্পটা। খুবই প্রাসঙ্গিক এবং ইন্টারেস্টিং। ধন্যবাদ 🙏💗
🙏🙏 ১লা অক্টোবরের গল্পটাও পড ।
সুন্দর মিস্টি গল্প। বেশ ভালো লাগলো। ব্যাডমিনটনের কথাটা গল্পের মধ্যে হয়তো বাড়ীর পরিসর বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। লেখার flow অনবদ্য।
🙏🙏
১লা অক্টোবরের গল্পটা পডে ওখানেই কমেল্ট দাও
আসানসোল ডিভিশনের ব্রিটীশ আমলের রেলের অফিসার কোয়ার্টার দেখেছো ? প্রত্যেকটা ১ বিঘা+ জমির ওপর তৈরি…সামনে ফুলের, পিছনে কিচেন গার্ডেন ! দেখাশোনার জন্য রেলের মালি !
ধরেছো ঠিকই ! রেলের অফিসার না করলে কোর্ট আসে না আর গল্পের শুরুয়াতটা জম্পেশ হয় না ।😀
Ami kal e porechi…. Khub bhalo legeche.
১লা অক্টোবারের গল্পটা পডে ওখানেই কমেন্ট দে ।
খুব ভালো লাগলো। হয়ত অনু গল্প হিসাবে একটু বড়। সাবলীল ভাষা।
ধন্যবাদ সুনীল ! অণুগল্প ক্যাটেগরিতে ফেলার ব্যাপারটা সন্পাদকের ওপর ছিল !
১লা অক্টোবরের ইস্যুর গল্পটা পডে কেমন লাগলো কমেন্ট দিও । এই গল্পের শেষে “লেখকের অন্য রচনা”-তে ক্লিক করো । ভাল লাগবে শিওর !
Khub valo laglo.
ধন্যবাদ পারমিতা । গত বইমেলাতে যে গল্প সংকলনটা বেরিয়েছে সেটা দেবো । কিল্তু তার আগে আগের বইদুটো শেষ করার ফিডব্যাক নেবো !!😀
সুন্দর লিখেছো।
লিখতে থাকো।
ধন্যবাদ !
নিটোল কাহিনীবিন্যাস। পাঠমুগ্ধ।
বেশ ভালো লাগলো।