রামনারায়ণ ও রামজীবন দুজনেই পড়াশোনায় মেধাবান ছিলেন ৷ দুজনেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন ৷ তার আগে দুজনেই সংস্কৃতে সাংখ্যতীর্থ ও বেদান্তশাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন ৷ কিন্তু পিতৃনির্দেশে রামনারায়ণ ইংরাজি ও ফিলজফি নিয়ে অনার্স করেন ৷ দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় সে সময় কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা সে খবর প্রকাশ করে ৷ রামনারায়ণ এই সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় ড. রাধাকৃষ্ণণ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর সঙ্গে কিছু বিষয়ে আলোচনাও করেন ৷ রাধাকৃষ্ণাণের মতবাদের বিষয়ে রামনারায়ণের সঙ্গে তীব্র মতভেদ সৃষ্টি
হয় ৷

রামনারায়ণ ভট্টাচার্য


রাধাকৃষ্ণাণ প্রভাবশালী হওয়ায় বন্ধুদের উপদেশে বেনারসে না থেকে রামনারায়ণ পার্লাকেমিডি চলে যান ৷ সেখানে পড়াশোনা করতে করতেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী পেয়েও তা না করে চলে যান মহিষাদলে ৷ মহিষাদলের রাজা তাঁকে সম্মান দেখিয়ে চাকরিতে নিযুক্ত করেন ৷ পরবর্তীতে বালেশ্বর ফকির মোহন কলেজে তিনি অধ্যক্ষ হন ৷ এবং সেখান থেকেই অবসর নেন ৷ বেনারসে থাকাকালীন রামনারায়ণের বিবাহ হয় ৷ তাঁর তিন পুত্র রামকৃষ্ণ (কার্তিক) {তার দুই পুত্র রামতনু ও রামতনয় , একটি স্বল্পায়ু কন্যাও ছিল যূথিকা, রামশঙ্কর (গণেশ) এর একটি পুত্র রামাঞ্জন , রামানুজ (খোকা)র এক পুত্র রামার্ক ও একটি কন্যা মেঘা ৷ কন্যা মালবিকা (খুকু)র এক কন্যা ময়ূরিকা ৷ রামানুজ আপাতত একমাত্র এই বংশের মানুষ যে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে ৷ তার একটি পুত্র রামার্ক ও একটি কন্যা মেঘা স্ব স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ৷

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়


অগ্রজ রামনারায়ণ বেনারস ত্যাগ করলেও কনিষ্ঠ রামজীবন স্বামীহারা মাকে নিয়ে বেনারসেই থাকতেন ৷ রামনারায়ণ মাঝে মাঝে আসতেন ৷ এবং উপার্জনের অর্দ্ধাংশ সংসারের জন্য পাঠাতেন ৷
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রামজীবন মেন্টাল সাইকোলজিতে মাস্টার্স করেন ৷ এমনকি রাঁচি কাঁকে গিয়েও তিনি গবেষণার কাজ শুরু করলেও অর্থের অভাবে ফিরে যান বেনারসে ৷
এসময় একটি ঘটনা ঘটে , চারমিনার সিগারেট কোম্পানী নতুন সিগারেট ব্যবসার জন্যে সুদৃশ্য কৌটোয় সিগারেট বিলি করছে দেখে তিনি নিয়ে বাড়িতে এসে দরোজা বন্ধ করে একটি খাওয়া শুরু করতেই মা কমলেকামিনী ‘কমলি ঠাকরুণ’ তা বুঝতে পেরে ক্রোধে পুত্রকে বঁটি দিয়ে কেটে ফেলার ভয় দেখালে রামজীবন প্রতিজ্ঞা করেন জীবনে আর সিগারেট স্পর্শ করবেন না , যে প্রতিজ্ঞা আ মৃত্যু তিনি রেখেছিলেন ৷

রামজীবন ভট্টাচার্য

মায়ের মৃত্যুর পর বেনারসের বাড়ি থেকে চাকরী নিয়ে তিনি চলে আসেন হুগলীর পাওনান বিদ্যালয়ে ৷ সেখান থেকে ১৯৫৩ সালে মাহেশের মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৷ সেখানে শিক্ষকতা করতে করতে সংস্কৃতে সপ্তম শ্রেণী থেকে বি.এ ক্লাস পর্যন্ত সংস্কৃত পাঠ্যপুস্তক লেখেন ৷ যার প্রকাশক ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত প্রকাশক ‘ মর্ডাণ বুক এজেন্সি ৷ সারা বাংলায় তাঁর বইগুলি ছাত্রপ্রিয় হয়ে ওঠে ৷ তরুণ রামজীবন পুনরায় তাঁর ফেলে আসা গবেষণার কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারেন পরিস্থিতি তা আর তাঁকে সম্ভব করতে দেবে না ৷ ফলে শিক্ষকতা আর সংস্কৃত গ্রন্থরচনাই তাঁর একমাত্র কাজ ৷ বিশিষ্ট সংস্কৃত পন্ডিত হিসেবে শ্রীরামপুর নামক প্রাচীন শহরে তিনি সম্মান ও খ্যাতি পান ৷
বেনারসে থাকাকালেই রামজীবন এলাহাবাদের “প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতি” থেকে সেতারে এম.মিউজ পাশ করেন ৷ আসাক আলি খাঁ র ঘরাণার সেতার বাদক ও মুস্তাক আলি খাঁ সাহেবের গুরুভাই রামজীবন সারা ভারতে প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতির পরীক্ষক নিযুক্ত হন ৷ আমৃত্যু তিনি এই পদেই ছিলেন ৷

[নুড়ি পাথরের সঙ্গে চলতে চলতে – ২]

0 0 ভোট
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
পংক্তির ভেতর মন্তব্য
সব মন্তব্য