আমার মামারবাড়ি অতি রক্ষণশীল এবং বিচিত্র সব নিয়ম মানা পরিবার৷ একটা সময় ছিল মেয়েরা জুতো পায়ে দিতে পারতেন না ৷ খড়ম পায়ে দিতে পারতেন৷ পুরুষেরা ধুতি ফতুয়া পাঞ্জাবী, পায়ে খড়ম বা কাপড়ের জুতো ৷ নিজের বাড়িতে বা দীক্ষিত আত্মীয়ের হাতে অন্নগ্রহণ করতেন৷ অথবা স্বপাক খেতেন৷ বিবাহের পর নতুন বউকে পঞ্চগব্য খাইয়ে নাড়ি শুদ্ধ করার নিয়ম ছিল ৷ শুনেছি সেক্ষেত্রে সামান্য গোবরও খেতে হয়েছে নববধুদের৷

ঠাকুমা কমলেকামিনী


পরে আমার দাদামশাইরা সময়ের সঙ্গে তাল রেখে সামান্য উদারপন্থী হলেও আজও অনেক নিয়ম মেনে চলেন এই পরিবারের মানুষেরা ৷ এমনকি আজও ব্রাহ্মণ ছাড়া বা স্বজাতি ছাড়া অন্য জাতে বিয়ে হলে তাকে ব্রাত্য করা হয় ৷ পারিবারিক অনুষ্ঠানে সে উপস্থিত হলে তাকে পরিবারের মুখ্য মানুষদের সঙ্গে খেতে বসতে দেওয়া হয়না ৷ বহিরাগতদের সঙ্গে খেতে দেওয়া হয় ৷ আমার শৈশবে দেখেছি বাড়ির মেয়ের বিয়ে হলে তার নিয়ম কানুন অন্য বিভিন্ন পরিবারের বিবাহের নিয়মকানুনের সঙ্গে অনেক তফাৎ ৷
আবার ছেলেদের বিয়ে হলে তার নিয়ম বহিরাগতার ক্ষেত্রে কিছুটা কঠিন ৷ তবে ওই বিরাট পরিবারভূক্ত হলে বিবাহিত নতুন মেয়েটিকে সবাই নানা ভাবে ভালোবাসা আর মৃদু শাসন দিয়ে গড়েপিটে নিতেন ৷
মায়ের মুখে গল্প শুনেছি বিবাহের যৌতুক বা তত্ত্ব দেওয়া হত প্রচুর ৷ তবে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থান বংশ পরিচয় আর্থিক অবস্থা বিচার্য ছিল ৷

মামার বাড়ির তিনতলায় চাঁদুনির ছাতে যাওয়ার গলি যার পাশেই ছিল আমার আর দিদিভাই থাকার ঘরটি

মায়ের বিয়ের সময় তত্ত্বে আসা প্রচুর মিষ্টি দেখে আমার জ্যাঠামশাই অতি পুলকিত হয়েছিলেন ৷ বাসরের দিন সিদ্ধি খাওয়ার পর দু’হাঁড়ি ক্ষীর আর এক টিন রসগোল্লা (৬০-৭০টা)খেয়ে অতি মজার সব ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ৷
আমার বাবাও ও জ্যাঠামশাইও যে খুবই রক্ষণশীল মানুষ ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ তবে তাঁরা দুইভাই খুব খাদ্যরসিক ছিলেন ৷ খেতেও পারতেন প্রচুর ৷ দু’জনে প্রতিযোগিতা করেও খেতেন ৷
মায়ের মুখে শুনেছি একবার ১৭-১৮ কেজি কচিপাঁঠার মাংস আর বড় এক হাঁড়ি ভাত খাওয়ার পর দুই ভাই আবার ভাত ও মাংস চাইলে ১২-১৩ বছরের মা আর জেঠিমা অত্যন্ত কুন্ঠিতভাবে জানিয়েছিলেন যে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই , যা রান্না করা হয়েছিল সবই দুই ভাই মিলে শেষ করেদিয়েছেন ৷ তাতে জ্যাঠামশাই বাবাকে মৃদু তিরষ্কার করে বলেছিলেন মাংসর দোকান নিশ্চিত ওজনে কম দিয়েছে , অভিযোগ করেছিলেন ভাতও কম রান্না হয়েছে ফলে পেটটা ঠিক ভরেনি৷ মা আর জেঠিমা সেদিন সামান্য ভাতরান্না করে আলুসিদ্ধ আর নুন তেল মেখে খেয়েছিলেন৷

মামাতো বোন কল্যাণী

আমার মামার বাড়ির মানুষেরাও খুবই খাদ্যরসিক ছিলেন ৷ সেখানে দুগ্ধজাত খাবারের আয়োজন ছিল প্রচুর ৷ আর আমি দিদিভাইএর স্নেহ ভালোবাসায় সেখানে থাকতে থাকতে ভালো ভালো খেয়ে দুষ্টুমিতেও সেরা হয়ে উঠেছিলাম ৷ মামাতো বোন কল্পনা আর আমি ছিলাম পিঠোপিঠি ৷ আমাদের দুইভাইবোনের ভালোবাসা আজও দুজনে দেখা হলে প্রকাশ পায় ৷ তবে কল্পনা দুষ্টুমিতে আমার সমান
ছিলনা ৷ অতি শান্ত মেয়ে কল্পনা আর শান্তু ৷ সোনামামার দুটি মেয়ে করুণা আর কল্যাণী ৷ ভেবে দেখুন আমাদের শৈশবের দলটি কত বড় ছিল যত দুষ্টুমি আমি আর শেখরদা ৷

মামার বাড়ির লাল দুর্গা


আমি ভালো ছেলে হবার চেষ্টা যে করতাম না তা নয় , কিন্তু ভরদুপ্পুর বেলায় দিদিভাই আমায় বুকের কাছে নিয়ে মুখে মুখে ছড়াশোনাতে শোনাতে বা গল্প বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লেই দুষ্টুবুদ্ধিগুলো পাশে এসে আমায় নানান পরামর্শ দিতে শুরু করে দিত ৷ মণ্ডপঘরের ওপর তিনতলার চাঁদুনির ছাতটা তখন হাতছানি দিয়ে ডাকতে শুরু করে দিত ৷ ঠিক সেই সময়টিতে হয়তো মনে হত সময় চলে যাচ্ছে সময় নষ্ট করা উচিত নয় ৷ উঠে পড়তাম ৷ দিদিভাই সারাদিনের পরিশ্রম শেষে গভীর ঘুমে ৷
প্রথম টারগেট ছিকে থেকে টুল বালিশ পরপর সাজিয়ে ক্ষীরের নাড়ু চুরি ৷ কিছুটা উঠেছি কি উঠিনি ৷ দিদিভাই বলে উঠলেন – ওরে পড়ে হাত পা ভাঙবি ? কি খাবি বল , দিচ্ছি ৷ ব্যাস , খাবার ইচ্ছেটাই রইলো না আর ৷ বললাম – নাঃ , দেখছিলাম কতটা বড় হয়েছি ৷

মামার বাড়ির সিংদরোজা ৷ তিনতলা সমান কাঠের দরোজাটি খুলে লোহার দরোজা করা হয়েছে সম্প্রতি৷


আমি এতটাই দুষ্টু আর দুরন্ত ছিলাম যে আমার জেঠামশাই আমার নাম দিয়েছিলেন
” শাখামৃগ ” ৷ যেটা আমার বাবা পছন্দ করেনি ৷ জেঠামশাই ওই নামে ডাকলেই বাবা বলতেন – দাদা শ্রীমানকে আপনি ওই নামে ডাকবেন না ৷
যদিও নতুন নামটা আমার খুব পছন্দের ছিল ৷ বাবা একদিন বলে দিল শাখামৃগ কথার অর্থ বাঁদর ৷ ব্যাস , আমার সব ভালোলাগা সেকেন্ডেই কষ্ট লাগায় পরিণত হল ৷ জেঠু ডাকলে সাড়া দিতাম না ৷ যদিও বাবাও নিষেধ করেছিল ওই নামে ডাকলে সাড়া না দিতে ৷

শেখরদা এখন৷ শৈশবের সব দুষ্টুমির যুগ্ম নেতার একজন৷

মামার বাড়িতে একান্নবর্তী পরিবারে অতগুলো প্রায় সমবয়সের ভাইবোন মিলে নানা দুষ্টুমির পরিকল্পনার দায়িত্ব আমার আর শেখরদার ওপরেই বর্তাতো ৷ চুরি করে আচার খাওয়া তো অতি সাধারণ ব্যাপার ৷ আরও নানা পরিকল্পনা ছিল ৷
আমার বাঁহাতে কুনুইয়ের ওপর একটা বড় কাটা দাগ আছে ৷ তখন আমি অনেকটাই ছোটো ৷ একটা কাঁচের চুড়ি হাতে গলিয়েছি কিন্তু আমি এতই বুদ্ধু যে টেনে খুলতে গিয়ে চুড়ি ভেঙে হাতের ওপরটা অনেকটা কেটে গিয়েছিল ৷ বাড়ি শুদ্ধু হুলুস্থুল ৷ দিদিভাই কেঁদে আকুল ৷ সেই হইহই দেখে আমি যন্ত্রণার কান্না ভুলে হতভম্ব হয়ে বসেছিলাম ৷ শেষে রক্তাবন্ধ হয়েছিল নানা উপায়ে৷ যেহেতু আমার প্রথম ভাইটি সুতিকা ঘরেই মারা গিয়েছিল তাই দিদিভাই সবসময় কিছু হলেই ভাবতেন আমি বুঝি মরেই যাবো৷ আগলে রাখতেন ৷ আজও মাঝে মাঝে আনমনে দিদিভাইয়ের আঁচল আর সেই পান-দোক্তার গন্ধ নাকে আসে৷

জেঠিমা বেলারাণী

অবশেষে বাবা আমাকে স্কুলে ভর্ত্তি করবে বলে নিয়ে এলো শ্রীরামপুরে ৷ সঙ্গে দিদিভাইও এলো ৷ আমার বোন মানু বা তনুশ্রী তখন আড়াই তিন বছরের ৷ আমি তখন পাঁচ কি ছয় ৷ সে বছরেই আমাদের বাড়ির সরস্বতী পুজোয় আমার হাতেখড়ি হয়ে গেল ৷ বাবা নিয়ে গেলেন বাড়ির পিছনেই বল্লভপুর হাই স্কুলে যাকে অনেকেই তখন বাংলা ইস্কুল বলতেন ৷ অনেক প্রাচীন
স্কুল , যদিও এখন সে স্কুল উঠে যাবার অপেক্ষায় ৷ দিদিভাই নতুন জামা প্যান্ট আগেই কিনে আনিয়ে রেখে ছিলেন ৷ সেটা পড়েই বাবার সঙ্গে ভয়ে ভয়ে হাজির হলাম প্রধান শিক্ষকের ঘরে ৷
প্রধান শিক্ষক গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার মুখে মুখে প্রশ্ন করে বাবাকে বললেন একে থ্রীতে ভর্ত্তি করুন ৷ ওয়ান টু র সবই জানে ও ৷ ভর্ত্তি হলাম থ্রী তে ৷ বাবা বাড়ি এসে দিদিভাইকে বললেন – মা আপনি তো মুখে মুখে ওকে যা শিখিয়েছেন তাতে ইংরেজী বাদে সবই ভালোই শিখেছে ৷ ওকে থ্রীতেই দিলাম ৷ দিদিভাই বললেন – আমি তো পাঠশালাতেও পড়িনি ৷ এমন কি শেখালাম যে ও একলাফে থ্রী!

বাবা

এখন এই বয়সে এসে আমিও ভাবি কোনও দিন পাঠশালাতেও না পড়া সেই বৃদ্ধা কিভাবে মুখে মুখে ছড়া কবিতা পড়িয়ে বা গল্প বলে আর শ্লেট পেনসিলএ লিখিয়ে আমার মধ্যে শিক্ষার পাশাপাশি কবিতার বীজটিও পুঁতে দিয়েছিল !
দিদিভাই তাই আজও আমার এই বয়সেও পরম বিস্ময় আমার কাছে ৷ আমার অন্তরে কাব্যবীজটি তো সেই বৃদ্ধাই পুঁতে দিয়েছিল তার অজান্তে ৷ তার মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম মৈমনসিংহগীতিকার গল্প , চণ্ডীমঙ্গল , মনসামঙ্গল , ধর্মমঙ্গলের গল্প , অন্নদামঙ্গলের পদ্য ৷ মুখে মুখে নানা লোকছড়া তো দিদিভাইই মুখস্থ করিয়েছিলেন ৷ পরে আমার মা ৷ মা আমায় আবৃত্তির জন্যে কবিতা মুখস্থ করাতো৷

আমি শ্রীরামপুরে এলে দিদিভাইও চলে আসতেন ৷ একবার বেশ মনে আছে মায়ের শরীর খুব খারাপ ৷ ডা. সুকুমার দত্তের নার্সিং হোমএ ভর্তি করা হল ৷ একদিন দিদিভাই আমায় আর মানুকে মানে আমার বড় বোনকে বললেন তোদের একটা ছোট্ট ফুটফুটে বোন হয়েছে ৷ কিন্তু একদিন হঠাৎ বাবার মুখ দেখলাম খুব চিন্তিত ৷ দিদিভাই কাঁদছেন ৷
ডা. বলেছেন মা নাকি আর বাঁচবে না ৷ বাবার চোখেও জল ৷ দু’দিন সে ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা আজও মনে আছে ৷ বাবা বাড়িতে সকাল থেকে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করে বারবার নার্সিং হোম এ যাচ্ছে ৷ দিদিভাই সারাদিন কাঁদছেন আর আমাকে আর মানুকে দেখা শোনা করছেন ৷ বাবা অল্প খেলেও দিদিভাই মুখে জল ছাড়া কিছুই দিচ্ছেন না ৷ রাতে আমাদের দুই ভাইবোনকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে চোখ মুছছেন ৷

সোনামামা … পণ্ডিত কুমারনাথ ভট্টাচার্য

অবশেষে চার পাঁচদিন পর বাবা বললেন বিপদ কেটে গিয়েছে ৷ ডাক্তার জানিয়েছেন আর ভয়ের কিছু নেই ৷ দিদিভাই আমায় বুকে জড়িয়ে অনেক কাঁদলেন ৷ আজ বুঝি সে কান্না একজন মায়ের আনন্দের কান্না ৷ সেই আট নয় বছর বয়সে সেদিন প্রথম আমি অনুভব করলাম মা মরে গেলে খুব কষ্ট হবে আমার ৷ দিদিভাইয়ের কান্না দেখে মানুও কাঁদছিল ৷
মানু ছোট বোনের নাম দিয়েছিল ..কচি ৷
অবশেষে মা বাড়ি এলো ৷ বাবা নিয়ে এলো ৷ সঙ্গে একজন মহিলা ছোট্টো কচি বোনকে কোলে নিয়ে ৷ আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম ৷ মানুও ৷ সেদিন কিন্তু মা আমাকেই বেশি আদর করেছিল ৷ কচি বোনটা সেই মহিলাটির কাছে ৷ মানুও মার পাশে , কিন্তু মা আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলেছিল – আমি তোকে ফেলে কোথায় যাবো বল ৷ কোত্থাও যাবো না ৷ তুই তো আমার সোনামানিক ৷
২০১৪ সালে মা যখন সত্যি সত্যি চলে গেল সেদিন মাকে বলেছিলাম – তুমিও তো কথা রাখলে না মাগো ! সেই চলে গেলে !! হয়তো আমি বড় হয়ে যাওয়ার ফলে মায়ের কাছে মানিকত্ত্ব হারিয়েছিলাম ৷

ছোট বোনের নাম রাখা হয়েছিল মিতা ৷ বাবা বড় বোন মানুর ভালো নাম তনুশ্রীর সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখলো ..গীতশ্রী ৷ মিতা জন্মাবার পর দিদিভাই শ্রীরামপুরে অনেকদিন ছিলেন ৷
ক্লাস ফোরে বৃত্তি পরীক্ষা উৎরে গেলে বাবা নিয়ে গিয়ে ভর্ত্তি করলেন মাহেশ হাই স্কুলে ৷ বাবাও তো ওই স্কুলেরই মাস্টারমশাই ৷ একদিনের কথা তখন আমি ফাইভ ৷ পড়া না পারার জন্যে বাবা একদিন খুব মারলেন ৷ আসলে আমার দোষ কিছুই ছিল না ৷ বইগুলোই আমায় পছন্দ করতো না ৷ অঙ্কের সঙ্গে ছিল কয়েক জন্মের মনমালিন্য ৷ বাবা সেটা বুঝতেই চাইতো না ৷ মার খেয়ে আমি দিদিভাইয়ের কোলে মাথা রেখে খুব কাঁদছি ৷ আমার পিঠে বাবার পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে দিদিভাই মাকে বললেন – চিনু আমার ছেলেকে আমি এখানে রাখবো না , নিয়ে চলে যাবো ৷ এখানে থাকলে ও মরে যাবে ৷ জীবন ওকে মেরেই ফেলবে ৷ পড়া না পারলে এভাবে মারতে হয় !
বিরাট ঘোমটা টেনে গুটিগুটি গিয়ে বাবার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন – জীবন আমায় নবদ্বীপ যাওয়ার ব্যবস্থা করো ৷ আমি ছেলে কালই নিয়ে চলে যাবো ৷ এখানে থাকলে ও মরে যাবে ৷ ছেলেকে মেরেধরে মানুষ করা যায় না ৷ আর যদি ছেলেকে আমার সঙ্গে যেতে না দাও তাহলে আমায় টিকিট কেটে দাও আমি কালই নবদ্বীপ চলে যাবো ৷
বাবা অপরাধীর গলায় আমতা আমতা করে বললেন – মা একটু বুঝুন…৷

আমি আর শেখরদা

কিন্তু বিন্দুবাসিনী খুবই জেদী ছিলেন ৷ সিদ্ধান্ত হল বাবা ট্রেনে তুলে দেবে ৷ দিদিভাই নবদ্বীপ চলে যাবে ৷
শুনে আমি তো আনন্দে নেচে উঠেছি , দিদিভাইয়ের সঙ্গে চলে যাবো , পড়াশোনা করতে হবে না ৷ বাবার পিটুনিও খেতে হবে না ৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি ৷ আমার পড়ার ক্ষতি হবে বলে বাবা আমায় যেতে দিলোই না ৷ দিদিভাই চলে গেলেন , সঙ্গে মা মানু আর মিতা ৷ যাওয়ার আগে আমায় বললেন – তুই সাবধানে থাকিস ৷ আমি করুণ চোখে দেখলাম তাদের যাওয়ার দিকে আর রইলাম বাবার হেফাজতে ৷ এর কিছুদিন পরেই হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা ৷ পরীক্ষা সবই দিলাম ৷ কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম অঙ্ক স্যার আমায় অপছন্দ করেন তাই কম নম্বর দেবেন নিশ্চিত ৷ কিন্তু তিনি যে আমায় ডবল জিরো দিবেন তা ভাবতেই পারিনি ৷ সব বিষয়ে মোটামুটি ৬০-৬৮ পেয়ে উৎরে গেলাম ৷ শুধু অঙ্কটাই ঝামেলা বাধিয়ে দিল ৷ অঙ্কের স্যার মনোজবাবু আমায় দুটো শূণ্য অনায়াসে দিয়ে দিলেন !

[লেখকের অন্য রচনা]

[পরম্পরা ওয়েবজিন, ডিসেম্বর ২৪, সূচিপত্র – এখানে ক্লিক করুন]