অরন্যের গভীরে
কেমন করে চলতে-ফিরতা মানুষটা একটা বটগাছ হয়ে গেল!
আমাদের চেখের সামনে পা দুটো হল শেকড় আর হাত দুটো অজস্র ঝুরি।
মানুষটা চাইত আমরা পাশে বসি, কথা বলি, গান গাই!
কিন্তু আমরা তো পাখি নই! আমরা অপদার্থ বিবেকহীন একবিংশ শতাব্দীর সময়ের পিছনে ছোটা দুপেয়ে প্রাণী!
আমরা কি করে বুঝব বৃদ্ধ গাছেদের কথা!
তাই অভিমানে গাছটি বাতাস জল সূর্যালোক দিয়ে খাবার বানানো বন্ধ করে দিল,
সকলে ভাবল যা হয়েছে ভালোই হয়েছে!
কতদিন আর থমকে থাকা সময়ের কাছে বসে বুলি কপচানো যায়!
একদিন গাছটা চোখ বন্ধ করে ফেলল,
পৃথিবীর কাছে তার সব দেনা শোধ করতে চাইল, তীব্র ঝোড়ো হাওয়া শাঁই শাঁই শব্দে একসময় গাছটির সঙ্গী হল, সারারাত ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লান্ত বিধস্ত গাছটি একসময় হয়ে গেল স্থির শান্ত সমাহিত।
এখন কী ভীষণ আফশোস, স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে অরন্যে ফিরে ফিরে যাওয়া আর প্রতিটি বৃদ্ধ গাছের কাছে নতজানু হওয়া।
সব জল সরে গেলে
নদীর রাক্ষুসীমুখ একে একে গিলে ফেলে ধানজমি, ঘর, বাগান, গাছপালা, পশুপাখি, এমনকি মানুষও!
বলাবলি করছিল গ্রামের মোড়লেরা।
খিদে পেলে সবাই রাক্ষুসী হয়, সে আমি কি তুমি!
নদীর খিদে পেলেই যত দোষ!
সভ্যতার দোহাই দিয়ে নদীর যাত্রাপথকে কতভাবেই না বেঁধেছো!
ভারী শৃঙ্খলপায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তবু আমাদের জীবনের নানাবিধ চাহিদা মিটিয়ে চলেছে,
জল জলই জীবন! একবারও কি ভেবেছো!
ওর বুক চিরে সোনালী স্বপ্নগুলো, লরী বোঝাই করে প্রতিদিনই নিয়ে যায়, সভ্যতার দোহাই দেওয়া মানুষগুলো,
জীবনযাপনের ক্লেদ মিশে যায় ওর স্বচ্ছ জলে,
ও নিঃশব্দে কাঁদে, শুনেছো কি ওর ক্রন্দনের ভাষা!
তাই একদিন ঝড়কে সঙ্গী করে অভিমানে ফুলে ফেঁপে উঠে, ও ভাসিয়ে নিয়ে যায় যত সভ্যতার অহংকার।
নদীর রাক্ষুসী মুখটাই দেখলে!
ওর কল্যাণী দেবীমুখটি দেখলে না!
সব জল সরে গেলে দেখবে, ভাসিয়ে নেওয়ার কষ্টের ছাপ সে রেখে গেছে পলিমাটির নিঃসঙ্গ নির্জনতায়।
খুব ভালো লাগলো।