অঙ্গারেওয়ালি রসিদ জাহান

লেখিকা রসিদ জাহানকে কেন্দ্র করে ১৯৩২ সালে তদানীন্তন ইউনাইটেড প্রভিন্সের রক্ষণপন্থী মহলে এক ঝড় ওঠে। কারণ, রসিদ জাহান ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর মাসে “অঙ্গারে” নামে এক সংকলনে সাজ্জাদ জাহির, আহমদ আলি, মাহমুদুজাফর এবং তাঁর নিজের লেখা গল্প এবং নাটক প্রকাশ করেন। রচয়িতাদের আশা ছিল এই সংকলন বিরাজমান সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর তরুণদের এক যুদ্ধ ঘোষণা করবে। জেমস জয়েস, ভার্জিনিয়া উলফ এবং ডি এইচ লরেন্সের লেখার থেকে অনুপ্রাণিত এই সংকলনের লেখাগুলি মানুষকে সামাজিক এবং ধর্মীয় মতবাদের কাছে দাসত্বের বিরুদ্ধে জাগরিত করবে বলে রচয়িতাদের ধারণা ছিল। শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে ধর্মীয় সংগঠনগুলি। লখনৌতে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া শিয়া কনফারেন্সে প্রকাশ্য জনসভায় প্রকাশিত বইকে “নোংরা পুস্তিকা” বলে ঘোষণা করা হয় কারণ এই বই “সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুভূতিকে আঘাত করেছে”। উর্দু সংবাদপত্রগুলিতে লেখা হয়, “আমরা এই লেখাতে অনৈতিকতা, অসৎ চরিত্র এবং নষ্টামি ছাড়া কোন মননশীল আধুনিকতা খুঁজে পাই নি”।

সমগ্র ইউনাইটেড প্রভিন্স জুড়ে মৌলবীরা এই বইয়ের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন। ইউপি বিধানসভায় এই বইয়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয় এবং ১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে এই বইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রাদেশিক সরকার। আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন একমাত্র মহিলা লেখক রসিদ জাহান। তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারারও হুমকি দেওয়া হয়। এই সব বিতর্কের ফলে ২৮ বছর বয়সি ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তারদের অন্যতম রসিদ জাহান আরও বেশি উদ্যমের সাথে লিখে যেতে থাকেন। তাঁর লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক নতুন প্রজন্মের মহিলা লেখিকার উদ্ভব হয়। এদের মধ্যে খুবই বিশিষ্ট হলেন ইসমত চুঘতাই। অঙ্গারে বিতর্কের সময় চুঘতাইয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর। চুঘতাই জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতির শিখরে পৌঁছালেও প্রথম “ভয়ানক শিশু” প্রায় বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছেন।

১৯০৫ সালে আলিগড়ের এক প্রগতিশীল পরিবারে রসিদের জন্ম। ১৯১৯ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন এবং খাদির তৈরি পোষাক পড়া শুরু করেন। পরবর্তী জীবনে ডাক্তারি করার সময়ও তিনি সাদা খাদির শাড়ি এবং হাতকাটা ব্লাউজ পড়ে বাড়ি বাড়ি রোগী দেখতে যেতেন। ১৯২৯ সালে তিনি দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন।

ডাক্তারির পাশাপাশি তিনি লেখা চালিয়ে যান। লখনৌতে কাজ করার সময় তিনি অঙ্গারে’র লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৩৩ সালে রসিদ জাহান কম্যুনিষ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে যোগ দেন এবং ইউপি শাখার এক সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ‘অঙ্গারের’ সহ-লেখক অক্সফোর্ড শিক্ষিত মাহমুদুজাফরকে বিবাহ করেন।

অঙ্গারে বিতর্কের এক লেখক সাজ্জাদ জাহির ১৯৩৫ সালে ইংল্যান্ড থেকে অধ্যয়ন শেষ করে দেশে ফেরেন। অঙ্গারে নিষিদ্ধকরণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে মৌলিক মতবাদি লেখকদের এক মঞ্চ গড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে প্রগ্রেসিভ রাইটার্স এসো্সিয়েশনের ম্যানিফেস্টো নিয়ে সাজ্জাদ জাহির রসিদের সাথে দেখা করেন। রসিদ জাহানের উদ্যোগে এই এসোসিয়েশনের প্রথম সম্মেলন লখনৌতে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে লেখক মুনসী প্রেমচাঁদ সভাপতির ভাষণে সাহিত্যের লক্ষ্য বর্ণনা করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি স্বামীর সাথে দেরাদুনে চলে আসেন। এখানে এসে তিনি ডাক্তারি, কম্যুনিষ্ট রাজনীতি, সাহিত্যসেবা এবং সাহিত্য পত্রিকা ‘চিঙ্গারি’র সম্পাদনা এবং নিজের পারিবারিক জীবন এই সব নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অঙ্গারের পর রসিদ জাহান প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ছোট গল্প এবং প্রায় ১৫ থেকে ২০টি নাটক লেখেন। দুঃখের বিষয় এর খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায়। সাহিত্য ঐতিহাসিক মধুলিকা সিং তাঁর গবেষণাপত্র “অন উওম্যানঃ দি ওয়ার্ক অফ ডাঃ রসিদ জাহান”এ লিখেছেনঃ “তাঁর লেখা ভারতীয় নারীকে সতী-সাবিত্রীর ঘেরাটোপে বেঁধে রাখে নি। বরং, তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলি প্রতিবাদী, প্রতিরোধী, দৃঢ়চেতা, তর্কশীল এবং স্পষ্টবাদী।”

১৯৫২ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মস্কোতে জরায়ুর ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে রসিদ জাহান মারা যান। মস্কোতে তাঁর সমাধি ফলকে লেখা আছেঃ “রসিদ জাহান-কম্যুনিষ্ট, চিকিৎসক এবং লেখক”।

সে

তার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা। আমার মতো সেও ওষুধ নিতে গিয়েছিল। ওকে দেখেই সব মহিলারা ওর থেকে দূরে সরে গেল। চোখ বন্ধ রেখে ডাক্তারও তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করলেন। আমিও তাকে দেখে বিকর্ষণ অনুভব করলাম। তবু বেশ কষ্ট করেই আমি তার দিকে তাকালাম, মৃদু হাসলাম। সেও মনে হলো হাসলো। তার মুখে নাক বলে কিছু নেই। সেখানে রয়েছে সাকুল্যে বিশাল ভয়ঙ্কর দু’টো ফুটো। একটা চোখ নেই। বাকি চোখ দিয়ে ঘাড় না বাঁকিয়ে সে কোনমতে দেখতে পারে।

কিছুক্ষণ পরে তার সঙ্গে আবার দেখা ওষুধ বিতরণের খিড়কিতে। সম্ভ্রম দেখিয়ে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কোথায় বাস করেন?’ তাকে আমার ঠিকানা জানালাম। ওষুধ নেবার পরে সে চলে গেল। কিছু জানতে না চাইলেও কম্পাউন্ডার আমাকে বলতে শুরু করলো, ‘খুব বাজে মেয়ে…এক বেশ্যা। দেহে পচন ধরেছে দেখলেন না? যে রোগের চিকিৎসা করতে সে এখানে আসে তাতেই সে খুব শিগগির মরবে। আমাদের ডাক্তারও এক বদ্ধ পাগল, প্রতিবার ওকে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। এমন জঘন্য জীবকে ধাপার মাঠে ছুঁড়ে ফেলা উচিৎ।’

সদ্য কলেজে পড়াশোনার শেষে গ্রাজুয়েট হয়ে আমি এক মেয়েদের স্কুলের শিক্ষিকা। পৃথিবী এখন আমার পায়ের নিচে। আমার সামনে ভবিষ্যৎ ফুলের বাগানের মতো, যেখানে গোলাপ আর সুগন্ধি যুঁই ফোটে। পৃথিবীকে আমার মনে হয় জ্যোৎস্নাস্নাত রাতের মতো। আমার মনে হয় আমি এক নদীতে ভেসে চলেছি আর সেই নদী এক সময় ধীরে বইছে আবার পর মুহূর্তে জলপ্রপাতের মতো নিচে আছড়ে পড়ছে। সুখ আমার হাতের মুঠোয়। কোন বেদনা বা দুঃখ আমি জানি না। শিক্ষকতা যেন এক সময় অতিবাহিত করার ব্যাপার। এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলেই জগৎ আমার সামনে এসে কুর্নিশ করে দাঁড়াবে।

পর্দা সরে গেল আর আমি দেখলাম সে স্কুলের আমার অফিস ঘরে প্রবেশ করছে। বিস্ময়ের সঙ্গে, অভ্যাসমতো আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। তাকে বললাম, ‘বসো।’ হাতে তার মোতিয়া’র ফুলসহ ডাল। সে সেটা আমার টেবিলে রাখলো। সত্যি করেই এক বিরক্তি আমাকে ঘিরে ধরলো। তবুও আড়ষ্ট হাতে নিজের অনুভূতি সামলে আমি ফুল তুলে নিয়ে কোনরকমে আমার চুলে লাগালাম। সে স্মিত হাসলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে ঘরের বাইরে চলে গেল। কোন কথার বিনিময় হলো না আমাদের মধ্যে।

এই ঘটনা রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। প্রতিদিন ক্লাস শেষ হবার পর সে আসে। পর্দা তুলে আমার ঘরে প্রবেশ করে। আমি তাকে বসতে বলি। সে বসে আর প্রতিদিনের মতো আমার সামনে ফুল রাখে। তাকে নিয়ে সহকর্মিরা আমাকে বিদ্রুপ করে। কিন্তু, সে যে চেয়ারে বসেছে কেউ সেই চেয়ারে বসে না। তার চেহারায় কেমন এক গা-ঘিনঘিনে ভাব রয়েছে। তাই আমিও যে চেয়ারে সে বসে সেই চেয়ার স্পর্শ করি না। বৃদ্ধা পরিচারিকা নাসিবন রোজ সে চলে যাবার পর গজগজ করতে থাকে আর বলে, ‘আমাদের নতুন দিদিমণি অদ্ভূত মানুষ! কেন তিনি এক নোংরা, জঘন্য জীবকে বসতে দেন? আমাকে কেন রোজ তার চেয়ার পরিষ্কার করতে হবে?’

প্রিন্সিপালও প্রচ্ছন্ন ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘কেন আপনি তাকে ডেকে এনেছেন? এর পরে মেয়েদের অভিভাবকরা একদিন অভিযোগ জানাবে এই বলে যে স্কুলে এক বেশ্যা আসে।’

পরের দিন সে আসে। আমিও বলি, ‘বসো।’ এখন সে একটু বেশি সময় আমার অফিসে বসে আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনদিনই আমাদের মধ্যে বাক্যালাপ হয় না। সে কি মনে করে আমি তার সম্বন্ধে কিছু জানি না? নারকীয় একমাত্র চোখের দৃষ্টিতে সে আমার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে, নাকহীন ভয়ঙ্কর মুখটি আমার দিকে ফিরিয়ে। কখনও আমার সন্দেহ হয়, তার চোখ বেয়ে জলের ধারা বইছে। সে কী ভাবে? আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো আমি বুঝে উঠতে পারি না।

প্রায়ই এমন হতো, সে আমার ঘরে এলে আমার সহকর্মিরা উঠে পড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতো। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ইংরেজিতে তারা আমাকে বিদ্রুপ করে বলতো, “চল, আমরা যাই। সাফিয়ার সেই ‘সে’ আবার এসেছে। চল আমরা লাইব্রেরিতে গিয়ে বসি। তার কুৎসিত মুখের দিকে ফিরেও তাকিও না।’

কোন এক সহ- শিক্ষিকা হয়তো বলতো, ‘জানো সাফিয়া। তার মুখ দেখার পর আমার খাবার ইচ্ছে উবে যায়। তার বিরক্তিকর মুখ দেখার পর আমার রাতে ঘুম আসতে চায় না।’

এক মোটা চেহারার শিক্ষিকা বলেন, ‘সে তার সবচেয়ে ভালো বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছে। সাফিয়া নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এই মহিলার জন্য আমাদের পর্দা ব্যবহার করতে হবে।’

সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার সময় আমি আমার কাজ করে যেতে থাকি। কিন্তু, অচিরেই আমার স্থৈর্যের বাঁধ ভাঙল। সে কী দেখতে পায়? কী সে ভাবে? একদিন কি সে আমার মতো ছিল? এই চিন্তায় আমার গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়।

সে কেন এখানে আসে? সে কি জানে না যে লোক তার চেহারাকে ঘৃণা করে? তাকে দেখে বিবমিষার উদ্রেক হয়? নাকের সেই দুটো লালাভ গর্ত থেকে সর্বদা শ্লেষ্মাজাতীয় তরল বেরিয়ে আসতে থাকে। প্রতিদিন আমি ভাবি তাকে বলবো আমার কাছে আর না আসতে। প্রিন্সিপাল সঠিকই ভাবেন! আর কলেজের মেয়েরাও নালিশ করতে শুরু করেছে। শিক্ষিকারা প্রায়ই যেখানে সেখানে বমি করে ফেলে। কিন্তু, সে যখন পরদিন আমার ঘরে প্রবেশ করে আমি চেয়ার দেখিয়ে বলি, ‘বসো’।

আচ্ছা, ওর কি কোন আয়না নেই? সে কি জানে না যে তার কৃত পাপের ফল ভোগ করছে? কেন কেউ তাকে একথা জানায় না? তার কি কেউ আছে? সে থাকেই বা কোথায়? কোথা থেকে সে রোজ এখানে আসে? সে কি সত্যিই ভাবে যে আমি তাকে এক অসুস্থ মানুষ বলে ভাবি? পুরো স্কুলে তার জন্য আমি হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছি। শুধু তাই নয়, আমাকে নিয়ে পরিহাসের বন্যা বয়ে যায়। তথাপি যখন প্রতিবার সে আমার সামনে ফুল তুলে দেয় আমি তা আমার চুলে লাগাই। সে ভয়ানকভাবে স্মিত হাসে।

সে কেন এই ভাবে আমার দিকে তাকায়? সে কে? সে কী ছিল? তার জন্ম কোথায়? কীভাবে তার এই ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়েছে? আমার কাছে এসে সে কী অনুভব করে? সে কি স্বস্তি পায় না বেদনা অনুভব করে?

একদিন সে আমার ঘর থেকে বেরোবার পথে নাক ঝাড়ে এবং বেরিয়ে আসা শিকনি দেয়ালের গায়ে মুছে দেয়। তার প্রতি নাসিবনের এতদিনের বিরাগ এক চরম সীমায় পৌঁছল। এমন ভাবে সে লাফিয়ে উঠলো যেন তার বয়স অর্ধেক হয়ে গেছে। বেচারার কোমরে সে কাঠের স্লেট দিয়ে এক জোর ধাক্কা মারলো। মহিলা কঁকিয়ে উঠলো।

কুড়ি বছর ধরে এক স্কুলে কাজ করে এবং এক শিক্ষিত পরিবেশে সময় কাটিয়ে যে সুশীল বৃত্তি নাসিবানের মধ্যে সঞ্চিত হয়েছিল, যে ব্যবহার সে এতদিন স্কুলের মেয়েদের মধ্যে নিষিক্ত করেছিল তা এক মুহূর্তে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো। তার প্রকৃত রাস্তার মেয়ের চেহারা বেরিয়ে এলো। গালির তোড় মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, ‘কুত্তি… বেশ্যা…এখানে আসা আর দিদিমণির ঘরে বসা এবার বার করে দেবো। কালকেও যে রাস্তার মোড়ে বেশ্যার মতো বসে ছিল, আজ যার গায়ে পচন ধরেছে সে এসে বেগমের মতো এখানে চেয়ারে বসে…’

সজোরে এক লাথি, পরে আর একবার, শেষে এক ঘুষি…

আমি ছুটে গিয়ে নাসিবানকে ধরলাম। ‘হায়, হায়… এ তুমি কী করছো?’
মেয়েরা আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়লো। গোলমাল দেখতে শিক্ষিকারাও চলে এলো। নাসিবান তখনও ক্রোধে চেঁচিয়ে যাচ্ছে।

‘তুমিই এই মহিলাকে মাথায় তুলেছো। সে নর্দমার এক পাথর। তুমি তাকে তুলে এনে স্কুলের ভিতরে নিয়ে এসেছো। আমি এখানে কুড়ি বছর কাজ করছি…। এত বছরে আমি কখনো বেশ্যাকে স্কুলে আসতে দেখিনি। আমি আর এখানে থাকবো না। পারলে অন্য কাউকে নিয়ে এসো।’ বলা শেষ করে পুনরুদ্দমে নাসিবান মহিলার দিকে তেড়ে গেল। তখন সবাই তাকে ধরে থামাল।

আমি নিচু হয়ে মহিলাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলাম। সে চিৎকার করে কেঁদে চলেছে। আমি তার বাহু ধরে তুলে স্কুলের প্রধান গেটের দিকে নিয়ে গেলাম। তার মাথার পাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সে তা বুঝতে পারছে না মনে হল। অশ্রু আর মুখ লুকিয়ে সে আধো আধো স্বরে কোন রকমে বলল, ‘এখন তুমি আমাকে জানতে পারলে।’ তার প্রস্থানপর অবয়বের দিকে আমি চেয়ে রইলাম।

সহযোগিতার হাত বাড়াতে ওপরের ছবিতে ক্লিক করুন

[লেখকের অন্য রচনা]

[পরম্পরা ওয়েবজিন, ফেব্রুয়ারি ২৫, সূচিপত্র – এখানে ক্লিক করুন]