যতক্ষণ আলো এসে পড়ে দুচোখে,
ততক্ষণ আলো ধরতে চাওয়া।
জীবন অনন্ত, অন্তহীন তার প্রত্যাশা।
‘যেতে নাহি দিব, তবু যেতে দিতে হয়…’
এ- জীবন মায়াময়, জরা- ব্যধি- মৃত্যুর
শোকাবহ পরিসমাপ্তি, ভয়ের শেষে
তবুও জীবন সদানন্দময়।
সময় কখনো মুখর,কখনো নিরুত্তর
গভীর রাতের ঘুমন্ত পাড়ার মতো।
‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব…’,
কোথায় যাব! আমার মৃত্যুহীন প্রাণ,
আমিতো মৃত্যুঞ্জয়ী হতে চাই!
তবুও বিচ্ছেদ বেদনায় বেদনাবিধুর
অন্তরে বেজে ওঠে এসরাজে দরবারি।
জরা-ব্যধি- মৃত্যুর সংলাপ শেষে
অবসন্ন শরীরের ভিতর যন্ত্রণাকাতর মন ছেড়ে
যেতে চায় সব মায়া……,
অজানায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে অকস্মাৎ,
নেমেতো যেতেই হবে, কিন্তু তাড়াতাড়ি নয়!
দাঁড়াও, আলো ধরো, গান গাও অমৃত আস্বাদে।
আমাদের দিকে তাকাও,পথ দেখাও হেসে,
হাসি ছড়াও দিকে দিগন্তে,
ভয়কে জয় করো,
জীবনের গান ধরো,নয় নয় আত্মসমর্পণ,
দেখ,এখনও অনেকটা পথ বাকি।
হাসি ছড়াও, সুর ছড়াও,
‘সুন্দর হৃদি নন্দন তুমি রঞ্জন ফুলহার’
বাঁচো অমৃত আস্বাদে।

শ্রাবণ মেঘের অঝোর ধারায় ভেজা দুটি চোখে
শুনেছি সে গান দেশ- মেঘমল্লারে,
গুটি গুটি পায়ে জীবন
হেঁটে যায় নিশ্চুপে
কালের যাত্রায় ঘাটের পথে।
কোলাহল থেমে গেলে
নিরুত্তর হয় সময়,
সেই ছুটন্ত টগবগে ঘোড়ার পায়ের ছন্দ
হারিয়েছে কবে কে জানে…!
ভিজে লকলকে ঘাস,
মাটির গন্ধ,ঝিলের জলে
ফোটা পদ্ম- শালুক তোলে
অনন্ত মাঝির ছেলেটা।
স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়ালে আজও চুঁইয়ে পড়ে জল,
সপ্তাহান্তে বসে হাট,মাথার পরে মেঘ ভেসে চলে,
দুপারে জেগে ওঠে জনপদ।
ভেজা জুঁই- বেলি- রজনীগন্ধার গন্ধ, কদমের সুবাস- বাতাস
বেয়ে দেখা দেয় আনন্দ।
কতদূর আর যাবে বলো?
কতদূর যেতে পারো তুমি?
বৃষ্টির জল ছুঁয়ে মুসাফির হতে চাও?
শ্রাবণের মেঘের মতো বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায় সাধের জীবন,
শ্রাবণের ধারার মতো ঝরে পড়ে দুঃখ -সুখ-আনন্দ।তবুও জড়িয়ে থাকে আলো অন্ধকার,
প্রিয়তমার মতো জড়িয়ে আছে বিশ্বচরাচর।
হারিয়ে যাওয়া রথের বাঁশিটা আবার ফিরে আসে,
মিলনমেলা ভেঙেগেলে বিরহ বেদনায় গান গায় বাউল —
‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি / কেমনে আসে যায়..’
অনন্ত বিস্ময় জেগেওঠে,
হদয়ের তারে মোচড় দেয় কে!
এমন ছায়াময় মায়াময়
পথে পথে তুমিও কি
প্লাবনে ভেসে যাও!
ভিজে যাও শ্রাবণ ধারায়!

ছবিঃ আন্তর্জাল

[পরম্পরা ওয়েবজিন, আগস্ট ২৪, সূচিপত্র]