সকাল থেকেই সানাই বাজছে রায় বাড়িতে। আজ সুনয়না দেবীর এক মাত্র সন্তান অভীক রায়ের বৌভাতের অনুষ্ঠান। অতিথি অভ্যাগত, আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনায় বাড়ি গমগম করছে। কিন্ত সুনয়না দেবীর মনে আশঙ্কার ঝড়। স্বামী মারা যাবার পর কত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছেন, বিয়ের পর ছেলে মাকে ভুলে যাবে নাতো!

বৌভাতের অনুষ্ঠান মিটতে রাত একটা বেজে গেল। অভীক কে ওর জাঠতুতো দুই বৌদি ওর ঘরে পৌঁছে দিল। ফুলে সাজানো খাটে অপেক্ষায় শ্রী, ওর নবপরীনীতা স্ত্রী। কতদিন ধরে অভীক অপেক্ষা করে আছে এই রাতটির জন্য। দরজা বন্ধ করেছে,এমন সময় দেখে মোবাইল বাজছে। মা ফোন করেছেন। এতো রাতে মা…! তাড়াতাড়ি মায়ের ঘরে গেল অভীক। মা বললেন,
-” অভি আমার শরীর টা খুব অস্থির লাগছে। তুই আমার কাছে একটু থাক বাবা। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।”


অভীক তাই করলো। যতবার মা ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে উঠে আসতে যায়, মা তার হাত চেপে ধরেন। এইভাবেই এক সময়ে সকাল হয়ে গেল।

সকাল বেলাটা সুনয়নাদেবীর ঠাকুরঘরেই কাটে। সকলেই জানে এই সময়ে ডাকলে উনি খুব বিরক্ত হন। আজও ঠাকুর ঘরের দরজা খুলে যখন বার হলেন তখন বেলা দশটা। ওনার জা এসে থমথমে মুখে ওনাকে একটা চিঠি দিল। উনি চিঠি খুলে পড়লেন-
মা, আমি শ্রী কে নিয়ে চলে যাচ্ছি। গতরাতের ঘটনা কোন কাকতালীয় নয়। এক অশনি সংকেত। আগামী দিনে কি ঘটতে চলেছে আমি বুঝতে পারছি। তোমার প্রতি যেমন আমার কর্তব্য আছে, যাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে এনেছি তার প্রতিও আমার একটা কর্তব্য আছে। আমি তোমার কাছেই আছি। সর্বদাই খোঁজ খবর করবো। ভাল থেকো। প্রণাম নিও। তোমার আশীর্বাদ আমাদের নতুন জীবনের পাথেয়। –

অভি

চিঠি পড়ে সুনয়নাদেবীর দেবীর চোখ জলে ভরে গেল। আবার ঠাকুর ঘরে ঢুকে তিনি দরজা বন্ধ করলেন। রাধামাধবের কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।

[পরম্পরা ওয়েবজিন, সেপ্টেম্বর ২৪, সূচিপত্র]

5 1 ভোট
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
পংক্তির ভেতর মন্তব্য
সব মন্তব্য
আইভি চট্টোপাধ্যায়
আইভি চট্টোপাধ্যায়
29 days ago

জীবনের গল্প ।