নতুন গাড়ী কিনেছে অরূপ, মারুতি ডিজায়ার! কম্পিউটার নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি পেয়েছে টাটার সংস্থায়। আপাতত সল্ট লেকের অফিস এ পোস্টিং। বছর খানেক পর বিদেশে যেতে হবে। আর প্রদীপের এবার ফাইনাল ইয়ার এম বি বি এস। শোভন অরূপ প্রদীপ শ্রীরামপুরে ইউনিয়ন স্কুল এ ক্লাস এইট থেকে একসাথে পড়ার সুবাদে, গলায় গলায় বন্ধু! শোভন গ্র্যাজুয়েশন করে ব্যাংক এ চাকরি পেয়েছে।

শোভনের মামাতো ভাই এর বিয়ে, হাওড়ার বড়গাছিয়া তে। এক সঙ্গে আনন্দ করা যাবে তাই শোভন, অরূপ প্রদীপ কেও নেমত্তন্ন করেছে।
আরো এক কারণে অরূপ প্রদীপ রাজি হয়েছে, সে হোলো শোভনের বোন পর্ণা!

নির্দিষ্ট দিনে অরূপ নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রদীপ কে পাশে বসিয়ে চলল বড়গাছিয়া।
রাস্তার ওপর বিরাট অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। গাড়ি চলতে চলতে দু বন্ধুই পর্নার কথা ভাবতে থাকে।
আহা যেন ডানা কাটা পরী!
যখন শ্রীরামপুরে আখনা স্কুল এ ক্লাস ফাইভ এ পড়ত তখন থেকেই দাদার দুই বন্ধু যেন ওর ও বন্ধু! শোভনের বাড়ী লুডো খেলা হতো।
প্রদীপ বলতো “আজ কিন্তু পর্না আমার পার্টনার।”
“না আগের দিন তুই ওর পার্টনার ছিলি” অরূপ প্রতিবাদ করে।
আরে বাবা যে হোক পার্টনার হলেই তো হোলো, শোভন বলে।
“না পর্ণা খুব লাকি! ওর হাতে খুব ছক্কা পড়ে। ওকে যে নেবে সেই জিতবে।”প্রদীপ বলে।
অরূপের রাগ হয়, তাই বলে লাকি পার্টনার তুমি ই রোজ নেবে?
আবার টোয়েন্টি নাইন খেলায় সেই একই ঝগড়া! অরূপ চায়
পর্ণা ওর পার্টনার হোক, ওর হাতে নাকি গোলাম বাঁধা! প্রথম হাতের তাস পেলেই, একটা গোলাম পর্ণার হাতে থাকবেই! প্রদীপ ও ছোড়নেবালা নয়, ঝগড়া করে।
প্রদীপ গান শেখে, পাড়ার কেষ্ট দার কাছে। পুজোর জলসা তে গান গায় কেষ্ট দা।
পর্নাও গান শেখে। অরূপ ডাইরি ভর্তি কবিতা লেখে, পর্ণা কে শোনায়।


তোমার নিবিড় গল্পে
পাঠক হয়ে বুঁদ হয়ে থাকি।
যতই পাতা ওল্টাই
তোমারই স্নিগ্ধতার জাল
স্বপ্নে বুনে থাকি!
আর প্রদীপ হাসতে হাসতে গান শোনায় পর্ণা কে
“কি নামে ডেকে বলবো তোমাকে, মন্দ করেছে আমাকে ওই দুটি চোখে!”
হেঁসে লুটিয়ে পড়ে পর্ণা।
পর্ণা কবিতাও ভালোবাসে, আবার গান ও ভালোবাসে। নিজেও গান শিখতে যায়, রবীন্দ্রসঙ্গীত।

বিয়ে বাড়ি খুব হৈ চৈ করে দেরী হোলো রাতের খাওয়া সারতে। তখনই শোভন বলল তোরা যাবার সময় আমার বোন কে নিয়ে যাস। ওর কাল একটা পরীক্ষা আছে। বাড়িতে বাবা আছে। এখানে আসেনি, শরীর ভালো নেই বলে।
“ঠিক আছে, ঠিক আছে কোনো চিন্তা নেই। আমরা নামিয়ে দোবো।” দুজনেরই এক কথা!
পর্ণার শরীরে যৌবনের ঝড়!
তাতে দুজনেই বেসামাল! বিয়ে বাড়ির সাজে, আজ অপরূপ সুন্দরী! তার আবেশে
দুই বন্ধুই মাতোয়ারা!

ফেরার পথ। রাত সাড়ে দশটা। খানিক যাবার পর রাস্তার বাঁকের কাছে হঠাৎ একটা কুকুর ছুটে আসে, তাকে বাঁচাতে গিয়েই গাড়ি কন্ট্রোল হয় না, অরূপের হাতে! সজোরে ধাক্কা লাগে রাস্তার ধারে একটা বড় গাছে!
তারপর বার বার ওলট পালট করে গাড়ি পড়ে যায় পাশের জল ভর্তি ডোবায়!

সেদিন জোৎস্না রাত! চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর।
প্রদীপ গাইলো “আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে…”
আজ জোৎস্না রাতে…
অরূপ কবিতা বলল
প্রিয়া অনেক ঋণ আছে, তোমার কাছে।
প্রেম, ভালোবাসা যা কিছু দিয়েছ,
আর যা কিছু দাও নি
সব ঋণ একদিন, সুদে আসলে
ফেরত দেবই!

পর্ণা বললো, আমি নারী আমি কি দুঃখ দিতে পারি! আমি আঁধার কাটিয়ে আলো; আমি ঝর্না হয়ে নদী;
আমি পাহাড় হয়ে ভূমি;
আমি ই মহাকাশ, আমি ই সাগর; আমি অনন্ত, আমার প্রেম ও তাই!

তিনজনেই তারা আজ অনন্ত প্রেমের পথে…

5 1 ভোট
Article Rating
7 Comments
Oldest
Newest Most Voted
পংক্তির ভেতর মন্তব্য
সব মন্তব্য
সৌরভ হাওলাদার
সৌরভ হাওলাদার
4 months ago

ভবিতব্যর ব্যথা নাকি চিরমিলনের পথচিহ্ন? এক অপার্থিব অনুভব হল।

Dr. Sujit Das.
Dr. Sujit Das.
4 months ago

” অনন্ত প্রেম ” অনন্ত মনে অনেকটা জায়গা দখল করে নিল। অসাধারণ –

আইভি চট্টোপাধ্যায়
আইভি চট্টোপাধ্যায়
4 months ago

আহা রে

Qazi Islam
Qazi Islam
4 months ago

আহারে- – মনটা খারাপ হয়ে গেল!

Gautam Bandyopadhyay
Gautam Bandyopadhyay
4 months ago

অসাধারণ লিখেছেন, যথার্থ অণুগল্প

Parna Datta
Parna Datta
4 months ago

ভীষণ সুন্দর গল্প | মন ছুঁয়ে গেল |

Syamali Bhadra
Syamali Bhadra
4 months ago

মন খারাপ হয়ে গেল। মর্মান্তিক পরিণতি।