আনলাকি
— ‘স্রেফ একটা নম্বরের জন্য এত টাকা বেশি গেল! একটা দশ বছরের বাচ্চার আবদার রাখতে এতগুলো টাকা খোয়াতে হল। দেখছিস তো চোখের সামনে বাচ্চাগুলো ওই দশ নম্বরটার জন্য পাগল। তার জন্য এতগুলো টাকা বেশি নিবি!’ — রাগে গজগজ করতে করতে বাইকটা সশব্দে স্ট্যান্ড করে বন্ধুর বাড়িতে ঢুকল একসময়ের এরিইয়ানস ক্লাবের ডাকাবুকো রাইট স্ট্রাইকার রণজয় গুপ্ত।
বাইরের বারান্দায় রোদ পোয়াচ্ছিলেন রণজয়ের অধ্যাপক বন্ধু মানস রায়। হাসতে হাসতে বললেন, –‘আয় আয়। বুঝেছি বুঝেছি। তা, কত নিল তোর ছেলের দশ নম্বর জার্সি?’
— ‘সাড়ে ছ’শ টাকা!’
–‘অ্যাঁ! বলিস কী রে! ওইটুকু বাচ্চার জার্সির এত দাম? ঠিকই বলেছিস তুই, দুশোর ওপর বেশি নিল তোর থেকে।’
–‘হ্যাঁ। কেন নেবে না? নেবেই তো! দশনম্বরি জার্সি না।’
–‘তা হঠাৎ জার্সি কেন? ক্লাবে ভর্তি করলি?’
–‘আরে না না, ক্লাব-ফ্লাব নয়। জিদানের দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। বহুদিনের দাবি একটা দশ নম্বর জার্সি ওর চাই।’
হাসতে হাসতে মানস এগিয়ে গেলেন ছোট্ট ছেলে জিদানেরে দিকে, –‘কনগ্র্যাচ্যুলেশনস ফর ইয়োর টেন ইয়ার্স হ্যাপি বার্থ ডে।’ বলে হাত মেলালেন। তারপর গলাটা নামিয়ে বললেন, — ‘এটা নাম্বার টেন ম্যাজিক বলো? তোমার বাবারও ছিল, বুঝলে? আর তার বাবারও। তাই তো তোমার জন্মের পরে তোমার নাম রেখেছিল, দশ নম্বরি খেলোয়াড়ের নামে। এটা জানো তো?’
–‘ইয়েস আঙ্কেল।’ লাফিয়ে উঠল জিদান, — নাম্বার টেন — মেসিইই। আওয়ার প্রাইড, আওয়ার ফ্যান্টাসি।’
–‘বলো তো আর কে কে দশ নম্বরি?’
–‘জাস্ট এ মিনিট আঙ্কেল। পেলে, মারাদোনা, প্লাতিনি, রিভালডো, রুনি, নেইমার এণ্ড অলসো ইয়োর জিদান।’ এক নিশ্বাসে মুখে খই ফুটিয়ে থামল জিদান।
— ‘অবভিয়াসলি মাই চাইল্ড। তবে জানো তো, এই দশ নম্বর বিপদের সংখ্যাও হয়েছে রিয়েল মাদ্রিদ দলের কাছে কখনও কখনও।
হতবাক জিদান মানসের দিকে তাকিয়ে, — ‘রিয়েলি আঙ্কেল?’
–‘ইয়েস মাই চাইল্ড। সব সময় দশ নম্বর উন্নতি আর অনুপ্রণার নম্বর হয়নি। এটা খেলার জগতে যেমন সত্যি, ব্যক্তিজীবনেও তেমন। আমাদেরই বাড়ির একটা ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে।’ এবার ফিরলেন বন্ধু রণজয়ের দিকে, — ‘মনে আছে তোর?’
মাথা নাড়লেন রণজয়, — ‘হ্যাঁ হ্যাঁ খুব মনে আছে। কাকু গেলেন ক্যানসারে — কস অফ ডেথ্ — এক্সেসিভস স্মোকিং।’
বিষণ্ণ মানস আঙুল ঠুকছেন চেয়ারের হাতলে, –‘ক্যান ইউ রিমেমবার হোয়াটস দ্য ব্র্যান্ড?’
–‘ইয়েস, মনে পড়েছে।’ চটজলদি জবাব রণজয়ের, — ‘নাম্বার টেন।’
উল্টোদিক থেকে জবাবি অলস উত্তর এল, –‘মোস্ট আনলাকি নাম্বার টু আস অ্যান্ড আওয়ার ফ্যামিলি।’
নিশ্চুপ জিদান তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে আর হাত বুলিয়ে চলেছে জার্সির দশ নম্বরটার ওপর।
[পরম্পরা ওয়েবজিন, সেপ্টেম্বর ২৪, সূচিপত্র – এখানে ক্লিক করুন]
দশ এ দশ নম্বর, সুন্দর একটি মেসেজ।