বিবর্তনের ধারাপাত
পর্ব ৭
বোর্ড পরীক্ষা, টিউশন এবং স্কটিশ কলেজের গল্প
দেখতে দেখতে ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষা চলে এল। এর মাঝে আর একটা বড় ঘটনা হয়েছিল। যেটা আগের একটা পর্বেও লেখা হয় নি। আমি যখন ক্লাস সেভেনে তখন আমার একটি বোন হয়। তুমুল উত্তেজনায়, অনেক প্রার্থনা করে আকাঙ্খিত siblingটি আসে। সেই বয়সে ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম বোন চেয়েছিলাম, বোন হয়েছিল বলে, পরে জেনেছিলাম (যেমন জানে সবাই আর কি) বোন হওয়ার পুরো ক্রেডিটই মা -বাবার । যাই হোক, আমার মাধ্যমিক দেওয়ার আগে আমার বোন অর্থাৎ তুলি আমাকে প্রায়ই বলত, ‘তুমি আবার পড়তে বসবে?’ আমার মা এর অসীম ক্ষমতা এবং ধৈর্য ছিল যে উনি প্রায় একজন পার হওয়ার মুখে আর একজনকে দিয়ে শুরু করেছিলেন। আমাদের মধ্যে এক যুগের অর্থাৎ ১২ বছরের তফাৎ ছিল।
তা যাই হোক, ভৌতবিজ্ঞান ও ইতিহাস বাদে আমার সব বিষয়েই টিউশন ছিল। আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য ছিল বাঙুর-লেকটাউন-দমদম পার্ক অঞ্চলে খুব ভালো ভালো টীচার এবং প্রফেসররা থাকতেন। তাই দৌড়ে দৌড়ে অনেক দূরে আমাকে কখনও পড়তে যেতে হয় নি। তাই বেশিরভাগ জায়গায় একাই যেতাম, কয়েকটি থেকে ফিরতে রাত হয়ে গেলে বাবা আনতে যেতেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে মনে আছে ভূগোল যার কাছে পড়তাম অজয় স্যারের কথা। দম দম পার্কে আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে পড়াতেন। যেদিন যেটা পড়াতেন পরের দিন ক্লাসের শুরুতে তার উপর পরীক্ষা নিতেন। ম্যাপ পয়েন্টিং প্রতিদিন মাস্ট। ভূগোলে আমরা সবাই মাধ্যমিকে লেটার পেয়েছিলাম। পরে অনেকদিন পর্যন্ত অজয় স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
মাধ্যমিকে প্রায় ৯০% নং পেয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হলাম। হ্যাঁ, আমাদের সময়ে ৭৫% মার্কস পেলেই তাকে নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। আমি ৮৭% মতো পেয়েছিলাম। সায়েন্স গ্রুপ ছাড়া ভুগোল ও ইংরেজিতে আমার লেটার অর্থে ৮০% নম্বর ছিল। অ্যাডিশনাল বায়োলজিতেও ছিল। স্কটিশে প্রথম কো-এডুকেশানে আসা। নিবেদিতা, বেথুন, টাকি, স্কটিশ এই সমস্ত স্কুলের বাঘা বাঘা ছাত্র ছাত্রীরা স্কটিশ কলেজে ঐ বছর ছিল। আমরাই ওখানে একাদশ-দ্বাদশ শেষ ব্যাচ। দুজন স্যারের কথা খুব বেশিভাবে মনে আছে। অংকের মলয় ব্যানার্জি যথা MB এবং ফিজিক্সের অরূপ রায় যথা AR। মলয় স্যার ভয়ংকর স্পিডে অংক করাতেন এবং মাঝে মাঝে ঐ স্পিডেই ইচ্ছে করে ভুল পড়াতেন। সেগুলি অবশ্য আমাদের ক্লাসের তুখড় ছেলেরা ভিক্টর, মনীষ, শুভদীপ এরা ঠিক করে দিত। অরূপ স্যার ভইয়ানক রাগী ছিলেন। প্রসঙ্গত স্যারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে। স্যার আমলাশোলে আদিবাসী অঞ্চলে একটি স্কুল তৈরীতে সিংহভাগ সাহায্য করেছেন এবং বছরের একটা বড় সময় ওদের সঙ্গেই থাকন। অরূপ স্যার ক্লাসে এলেই পিন-ড্রপ সাইলেন্স হয়ে যেত। ক্লাসে নিয়মিত পড়া জিজ্ঞাসা করতেন। একদিন আমাকে প্রেসারের ডেফিনিশান জিজ্ঞাসা করেছেন। যথারীতি জানা জিনিস ভয়ের চোটে আর বলতে পারছি না। স্যার বেশ কিছুক্ষণ দেখে ডাকলেন কাছে। আমি তো ভাবছি এবার না চড় থাপ্পর পড়ে! কাছে যাওয়ার পর বললেন হাত বাড়াতে। একটা পেনের পিছন দিকটা দিয়ে হাতের তালুতে হাল্কা চাপ দিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “ব্যথা লাগল?” আমি বললাম,”না’। এরপর পেনের নিবটা দিয়ে হাতে জোরে চাপ দিলেন। এবার ব্যথায় হাত সরিয়ে নিলাম। স্যার বললেন,’ পেনের পিছন দিক দিয়ে চাপ দেওয়ায় তোর হাতে বেশি প্রেসার লাগে নি,কারণ বেশি এরিয়া জুড়ে চাপ দিয়েছিল। নিব দিয়ে চাপ দেওয়ায় খুব কম এরিয়ায় চাপ পড়েছে। তাই ব্যথা লেগেছে। প্রেসার হল ফোর্স পার ইউনিট এরিয়া।” ঠিক এইভাবেই বুঝিয়েছিলেন। প্রায় বাইশ বছর আগের কথা, চিতায় ওঠা পর্যন্ত এই ব্যাখ্যা ভুলবো না বলেই ধারণা। সেদিন বুঝেছিলাম কোনও সাবজেক্টের ভালো লাগা বা মাথায় রাখা পুরোটাই নির্ভর করে যে বোঝাচ্ছে সে মা-বাবা বা শিক্ষক যেই হোক না কেন, তাদের বোঝানোর ওপর।
স্কটিশ কলেজের দু’বছর খুব ভালো কেটেছিল। গার্লস স্কুলের বেড়াজাল কেটে প্রথম সহ-শিক্ষার অভিজ্ঞতা। আমার বন্ধু অমৃতা, অরমিতা, দেবলীনা, নিতু,ভিক্টর, শুভজিৎ, ডোনা,সুমনা সবাই আজ উচ্চপ্রতিষ্ঠিত।
আস্তে আস্তে ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্স এসে গেল। এবং আমি ডাক্তারীতে চান্স পেলাম না। যাই হোক। পরের বার আর একবার দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও মা বিশেষ করে বছর নষ্ট করার পক্ষপাতী ছিলেন না। এবং আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী যে মা-বাবা আমাকে কোটাতে পাঠানোর কথা ভাবেন নি। আজকাল তো মাসে মোটামুটি দুটো আত্মহত্যার খবর কোটা থেকে আসে। আমার থেকে মা-বাবা’র প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া ছিল না, নিজেরটা নিজে খেয়ে পরে থাকার ব্যবস্থাটা করে নিতে পেরেছি।
( পরের পর্বে হলদিয়ার গল্প)
Each of the part is excellent as if watching a movie on a girl called Titli . I can’t still think you as a woman . Will be eagerly waiting for the next episode. All the best.