সেই সময় হিন্দু কলেজে ছাত্ররা কে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, সব বিষয়ে ডেভিড হেয়ারের সজাগ দৃষ্টি ছিল। এমন কি ছাত্রের মা-বাবা যা না জানতেন, ডেভিড হেয়ারের সব গোচরে আসত।
একবার মির্জাপুর মিশনে মেণ্ডিল নামে এক পাদ্রী এসে বাইবেল পড়তে ইচ্ছুক ছাত্রদের বাইবেল উপহার দিয়ে খ্রিস্ট-ধর্মের গুণকীর্তন করে ছাত্রদের প্রভাবিত করতে থাকেন। সেই ব্রিটিশ শাসিত বাঙালির জীবনে ধর্মপরিবর্তন ছিল তখন ঝড়-তোলা ঘটনা। দু তিন দিন পরে ডেভিড হেয়ার, মালী কাশীকে দিয়ে বাইবেল সংগ্রহ করা ছাত্রদের ডেকে নিলেন। তাদের দেখে বিকট মূর্তি। প্রত্যেককে এক এক ডজন বেত্রাঘাত এবং পরে মিষ্টি কথায় বুঝিয়ে বাইবেলগুলো উদ্ধার করেন। ধর্মান্তরের ভয় এবং পাশাপাশি হিন্দু কলেজের সুনাম ছিল যে, তারা খ্রিস্ট-ধর্ম গ্রহণে উৎসাহ দেয় না — তা নষ্ট হচ্ছিল। সেই জন্যই ডেভিড হেয়ারের এই পদক্ষেপ।


সেই সময় হিন্দু কলেজের আবহাওয়া ছিল খোলামেলা, কোনো ধর্মই প্রাধান্য পেত না। তার কারণ সেখানকার ছাত্ররা অ্যালবার্ট গিবন পড়ত, ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লব–তার উপর লেখা বই, লেখকদের নিয়ে আলোচনা করত আর ডিরোজিওর অনুকরণ করত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ভঙ্গকারী ছাত্রদের শিক্ষাব্রতী হেয়ার শাস্তি দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে মধুসূদন দত্তর বন্ধুরা মধুসূদনের বাড়ি নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে দেখেছে, পিতা রাজনারায়ণ দত্ত আলোবোলায় ধূমপান শেষ করে নলটি ছেলের হাতে তুলে দিতেন। সাদা চোখে দেখলে, মধুসূদনের যথেচ্ছাচারের পথ খানিকটা রাজনারায়ণই প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। মধুসূদনও থামতে বা সংযত হতে শেখেননি জীবনযাপনে– তাই হয়তো ওই বিপুল প্রতিভার ওই ভাবে অত তাড়াতাড়ি অবসান…।

[পরম্পরা ওয়েবজিন, জানুয়ারি ২৪, সূচিপত্র]