আলো জ্বালাও নি কেন মণি?
অন্ধকারে বসে আছো!

এমনিই রে! একলা বসে থাকলে কত কী আসে মাথায়! খেয়ালই করিনি তুই আজ বাড়িতে!

না মণি, কিছু একটা ভাবছিলে তুমি! মন খারাপ তোমার?

না রে, এলোমেলো চিন্তা সব! কখনও কখনও হয় অমন– ধর, কাউকে তুই গভীর ভাবে বিশ্বাস করলি অথচ সেই আস্থাটুকু ধরেই রাখতে পারলে না সে! নিজের ভেতর একটা কষ্ট হয় বৈকি তখন, তবে, বেশিক্ষণ না, আবার সামলে নিই! জীবন কি থেমে থাকে?

রাগ হয় না? কি করে পারো তুমি?

তাহলে তোকে পলিয়ানার কথাটা বলি বরং!
এগারো বছর বয়সে বাপ মা দুজনকেই হারিয়ে সে থাকতে এলো মাসির কাছে। মাসি বিয়ে থা করেনি, খুব খিটখিটে, সবাই তার দাপটে অস্থির! পলিয়ানাকে যে খুব ভালবেসে আশ্রয় দিয়েছিল সে তেমনও না, নেহাৎ কর্তব্য, তাই!
পান থেকে চুন খসলেই শাসন!

খুব কষ্ট হ’ত নিশ্চয়ই মেয়েটার! কাঁদত খুব?

নাহ্, এ মেয়ে সে ধাতুর নয়! মন খারাপ হলে সে একটা খেলা খেলত, গ্ল্যাড গেম! এটা ওকে ওর বাবা শিখিয়েছিলেন। পৃথিবীর সব খারাপের মধ্যেও একটা না একটা ভাল লুকিয়ে থাকে, সমস্ত সিচুয়েশনে সেটাকে খুঁজে বের করাটাই আসল খেলা!

বলো কি!

প্রথম ক্রিসমাস, উপহারের ঝুলি থেকে পলিয়ানা আশা করেছিল পুতুল টুতুল পাবে একটা কিছু, পেল না! ওর ভাগ্যে উঠল একজোড়া ক্র্যাচ! দুঃখ পেলেও পলি র মনে হ’ল, ভাগ্যিস এ দুটো কাজে লাগানোর মতন অবস্থায় নেই আমি! অমনি কষ্ট টা হাল্কা হয়ে গেল!

আজব মেয়ে তো!

বাড়ির বাকি লোকজনও আস্তে আস্তে মেতে উঠল এ খেলায়! স্বভাব টা ভারী মিষ্টি তো মেয়েটার! ক্রমে ওদের ছোট্ট শহরের অনেকেই এ খেলায় মেতে উঠল…পলিয়ানা সবার কাছেই প্রিয় তখন!

আর, ওর মাসি?

পরে মাসি ও গলেছিল, তবে তখনও তিনি অনড় ! একদিন ব্রেকফাস্টের টেবিলে দেরী করে আসায় পলিয়ানার শাস্তি হল কাজের মেয়ে ন্যান্সির ঘরে আটক থাকার, খাওয়াও তদ্রুপ, ন্যান্সির খাবারই খেতে হবে পলিয়ানাকে।

কি করল সে,
মানে তোমার ঐ পলিয়ানা?

সে তো বেজায় খুশি! ন্যান্সিকে বেশ পছন্দ করত তো, ন্যান্সির খাবারই বা অপছন্দ হবে কেন তার! শাস্তিটা তার কাছে পুরস্কার হয়ে গেল !

জব্বর মেয়ে!
কে হারাবে, একে? আরও একটু বলো!

এরপর একটা ঘটনা ঘটল। দুর্ঘটনাই। থেঁতলে গেল দুটো পা পলিয়ানার। গোটা শহর কাঁদছে তখন, কেবল পলিয়ানা নিশ্চিন্ত। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সে ভাবছে, বেঁচে গেছি যখন ঠিক হাঁটতে পারব! সে বরং এত লোক তাকে ভালবাসে, এমনকি সেই মাসি ও তার জন্য কাঁদছে, এটা দেখেই খুশি!
মাসির অবশ্য ততদিনে বিয়ের আয়োজন হয়েছে, অনেক নরম হয়েছেন তিনি ততদিনে।

পা ঠিক হ’ল না পলিয়ানার?

হ’ল তো, আলবাত হ’ল!
এমন মেয়ে হাঁটবে সে আর বলতে হয়?

আশ্চর্য কথা শোনালে আজ! ওর বাড়ি কোথায়?

বাড়ি? তোর আমার সকলের মনে ওর বাসা!
একশ’বছরেরও আগে পোর্টার নামের এক সাহিত্যিক পলিয়ানার চরিত্র টি সৃষ্টি করেন! তারপর থেকে সত্যি না হয়েও পলিয়ানার জায়গাটা ধ্রুব হয়ে গেছে! সিনেমা,নাটক কত কি! মূর্তিও বসেছে! সাতের দশকে সাইকোলজির পাঠক্রমে নতুন একটা ধারাই তৈরী হ’ল ” পলিয়ানা প্রিন্সিপল ” নামে!
নে, এবার তো আলোটা জ্বালা!

চুপ করে বসে থাকে তিতলি,আস্তে আস্তে বলে অন্ধকার তো নেই! আলো ই চারপাশে!
ভাল মন্দ কোনও টাই স্থায়ী নয় যে, এটা তো ওইটুকু মেয়েটা শিখিয়ে দিল, আমি বরং একটু চা করে আনি?

হাসতে হাসতে বলি,
মায়ের কথাটাও ভুলিস না যেন!

বই সংগ্রহ করতে ওপরের ছবিতে ক্লিক করুন

[পরম্পরা ওয়েবজিন, মার্চ ২৪, সূচিপত্র]

0 0 ভোট
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
পংক্তির ভেতর মন্তব্য
সব মন্তব্য
ডাক্তার দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডাক্তার দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়।
7 months ago

অপূর্ব লাগলো ভাই, তোমার লেখা টা!
সব মানুষের এই পলিয়ানা, মনের মধ্যে
গেঁথে ফেলা উচিত।