হল-এ বসে কাঁদা
হাঁদা। হ্যাঁ, এটাই ভাবছিলাম আজ নিজেকে, সকালে চা খেতে-খেতে।
ইত্যবসরে একটা বেচারি মারি নেতিয়ে, ফস্ করে আত্মহত্যা করে ফেললো কাপের তলায় সেঁধিয়ে গিয়ে। দু’আঙুলের উদ্ধারকারী বাহিনী ব্যর্থ হয়ে সাঁতরে উঠে এলো। ব্যর্থ হলো একটা নির্দোষ বিক্কুজীবন, আমার প্রভাতী আত্মমগ্নতার ঠেলায়।
অথচ কাল এত ভাল্লগছিলো নিজের অশ্রুসজল মুখমণ্ডল দেখে! মানে, বুঝে। মানে, হাত দিয়ে চোখ মুছতে-মুছতে। কী যেন একটা… ফিরে এলো আবার! দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর, মিনির বিয়ের দিন!
কাবুলিওয়ালা। বহু বচ্ছর বাদে কাঁদলাম এই ছবিটা দেখে। বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : এটি কোনো চিত্রসমালোচনা নয়!
কীভাবে প্রায় কাবুলিওয়ালার বয়সী একজন মানুষ মিনির বয়সে ফিরে যায়! সিনেমায়! যদি তা হল-এ বসে দেখা যায়। পুনরায় প্রমাণিত।
সেই ছোটবেলায় কাঁথিতে। ‘লালকুঠি’ নামের একটা সিনেমার শেষপর্ব। ড্যানির মৃত্যুমুহুর্তে ‘বন্ধু’ বাচ্চাটির দেওয়া সব লজেন্স সে হাত বাড়িয়ে ফেরত দিচ্ছে… সেই দৃশ্যে… এক্কেবারে ভেউভেউ করে সশব্দে কান্না কেঁদেছিল একটা বাচ্চা ছেলে। ‘বই’ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও, দীঘা অবধি কান্না থামেনি তার।
আছে কি সেই হল-টা, আজও?
আছে কি সেই মন-টাও? আজও?
বুলডোজার চলে যাওয়ার পরেও কখনো কখনো, ধুলো ফুঁড়ে মাথা তোলে একটা ছোট্ট বেয়াড়া চারাগাছ!
কৈশোরে গল্পগুচ্ছ হাতে পেয়ে পড়েছিলাম। গলার কাছে দলা পাকিয়ে এসেছিল কী-যেন। তারপর তপন সিংহ আর ছবি বিশ্বাস! কিন্তু সেসব তো কস্মিনকালের কথা!
সংবেদনের ধার! কতটা ধারালো আছে? অন্যের কষ্টে কতটা কেঁদে ওঠে মন? অস্পৃশ্য ব্যথার অদৃশ্য অনুরণন কতখানি দোলা দেয়, আত্মায়?
হৃদয়ের সুকুমার বৃত্তির এই আয়ুপরীক্ষার কষ্টিপাথর হাতে নিয়ে পর্দার আড়ালে বসেছিলেন যিনি, তিনিও এক স্নেহময় দাড়িওয়ালা। নাহ, কাবুলদেশীয় নন তিনি। তাঁর নাম… রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কে আবার!
মহাবিশ্বে কিচ্ছু হারায়নি!হারায় না!
আছে! আছে! ‘আছে সে নয়নতারায়’…
টিকিটের দামটা সস্তা লাগছে।
আর ভিজে রুমালটা দামী।
রমাপ্রসাদ বণিকের একটা নাটক ছিল, ‘ভ্যাবলাই ভালো’। অন্তঃপুরে থাকুক, কিন্তু, বাঁচুক!
বাড়ি যা, হাঁদা। এখনো বেঁচেই আছিস!
bah chomotkar