অংশুমান ঘোষ

শিয়ালদায় ফ্লাইওভারের শেষে লোক ডাকতে ডাকতে ধীর গতিতে চলা মিনিবাসটাতে চন্দ্রিল লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। প্যাকেটে মোড়া কার্ডগুলো বগলদাবায়, যেগুলো ডেলিভারী নিতে শিয়ালদায় আসা। বেকবাগানে আগের অফিসের কলিগদের কাছে যেতে হবে। ভীড় ঠেলে ঠেলে চন্দ্রিল ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালো। বেশ কিছুটা রাস্তা যাবার পরে এক ভদ্রলোক সিট ছেড়ে উঠে পড়লেন। ফাঁকা সিটে বসতে গিয়ে চমক। এতক্ষণ খেয়াল করেনি জানলার ধারে বসে উদিতা! আগের থেকেও অনেক সুন্দরী হয়েছে। হলুদ শাড়ি, কপালে মানানসই টিপ, কানে ঝুমকো জাঙ্ক জুয়েলারির দুল, লিপস্টিকে লাল ঠোঁট। ঘন কালো আইলাইনার আয়ত চোখদুটিকে আরও গভীর করে তুলেছে। সিঁথিতে সিঁদুর।
-তুমি!
-আশা করোনি নিশ্চয়? হঠাৎ এই ভাবে দেখা হয়ে যাবে?
না। চন্দ্রিল সত্যিই আশা করেনি এইভাবে এতদিন পরে উদিতার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। শুনেছিল বিয়ের পরে কলকাতার বাইরে চলে গেছে।
-কেমন আছ?
-ভালো। তুমি?
-আমিও। বিয়ে করেছ?
-এখনো নয়, তবে খুব শীঘ্রই। যদি নিমন্ত্রণ জানাই আসবে?
-আমি বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতায় রয়েছি। কালকেই ব্যাঙ্গালোর ফিরে যাচ্ছি। পরের বার এসে তোমার বউয়ের সঙ্গে আলাপ করব। সঙ্গে তার ছবি আছে নিশ্চই? আপত্তি না থাকলে দেখাবে?
এই সময়ে কন্ডাক্টার এসে ভাড়া চাইলেন। চন্দ্রিল পার্স বার করতে করতে জিজ্ঞেস করল-
তুমি কোথায় নামবে?
-আমার টিকিট আগেই হয়ে গেছে।
টিকিট নিয়ে চন্দ্রিল ফোন বার করে ছবিটা দেখাল। উদিতা অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলল- খুব সুন্দর মুখখানা। বেশ মানিয়েছে। কি নাম?
-আর্যা
-আর্যা। বাঃ। তোমার নামের সঙ্গে সঙ্গতিও আছে। শিব-দুর্গা। তা, স্বনির্বাচিত, নাকি বাড়ির লোকের পছন্দের?

– ফেসবুকে আলাপ। তারপর…
– দাদা বেকবাগান নামবেন তো? তাড়াতাড়ি আসুন
পিছনে বোধহয় অন্য বাস এসে গেছে, কন্ডাক্টার তাড়া লাগালেন। চন্দ্রিল তাড়াহুড়ো করে বিদায় জানিয়ে বাস থেকে নেমে পড়তেই বাসটা দ্রুত গতিতে ধুলো উড়িয়ে চলে গেল। এক ঝলক উদিতার মুখটা দেখতে পেল চন্দ্রিল। জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎই খেয়াল হল তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে বিয়ের নিমন্ত্রণের কার্ডের প্যাকেটটা বাসের সিটে ফেলে এসেছে।

[পরম্পরা ওয়েবজিন, ডিসেম্বর ২৩, সূচিপত্র]