টুল এবং টুল সম্বন্ধীয়

আর একদিন আসিয়া পড়িল।যদিও কোনো শর্ত ছিল না পরবর্তী লেখা পূর্বের অনুসারী হইবে বলিয়া অথবা যে উৎসাহ মাগুর মৎস্যের ন্যায় জিইয়ে রাখা হইয়াছিল যথা সময়ে বিহিত করা হইবে বলিয়া তাহা সমাধানে তৎপর হইতে হইবে বলিয়া,তথাপি সম্ভাবনা সেদিকেই গড়াইবে বোধ হইতেছে। তবে মুশকিল হইলো সবই তো তেনার কারসাজি। সকালে তড়াক করিয়া ঘুম হইতে উঠিয়াছিলাম চিকিৎসকদিগের উপর এক হাত লইব বলিয়া, হাসপাতালে ঠ্যাং বাঁধিয়া শোয়াইয়া রাখিলে রোগী যে রূপে দিল তড়প তড়প কে কাহা গুন গুন করে সেই রূপে আর কি।মানে এইরূপ, ঠ্যাং খুলিয়া দেখো একবার, সজোরে..। আজ্ঞে থাক। নিজে শিক্ষক বলিয়া জানি চিকিৎসক আর শিক্ষক এই দুই শ্রেণি শ্রদ্ধা এবং গালি সমানুপাতে পাইয়া থাকেন। যাহা প্রাপ্য তাহা গায়ে মাখিলেও প্রাপ্য না মাখিলেও। ছক কাটিয়া ক্রিকেট মাঠে না হইলে অমন জুতসই জায়গা খোঁজা হইত না। কিন্তু সময়ের কাজ সময়ে না করিলে তাহা ঝিমাইয়া যায়,বা অধিক না হইলে ঝিম ধরিয়া যায়।আমারও তাহাই হইল। মনে যখন হইলো আর লিখিতে শুরু যখন করিলাম তাহার মধ্যে সময় ব্যবধান বিস্তর।তাই ধক গেল কমিয়া।তথাপি দু’চারটি কথা যখন বলিব বলিয়া স্থির করিয়াছি তখন বলিয়াই ছাড়িব।


প্রসঙ্গ মনোরোগ, টুলো পন্ডিত এবং উহাদিগের সম্পর্ক নির্নয়। যে কথা বলছিলুম,নব্বইয়ের দশকে পথে প্রান্তরে ব্যাঙেরছাতার ন্যায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গজাইয়া উঠিলো। তা ছত্রাকের উত্তম নাম যদি হয় মাশরুম তাহা মাসে হস্তান্তরিত হইয়া লাভ বই ক্ষতি হয় নাই। জনগণের ক্ষেত্রে তাহা অত্যন্ত সুস্বাদু এবং উপকারী।কিন্তু সঠিক নির্বাচন করা না গেলে তাহা হইতে বিষবৎ বিপত্তি হইতে কাল বিলম্ব হয় না। এই করিয়া যে ফুরুং ফারুং মার্কা একটি প্রজন্মের উৎপত্তি হইয়াছিল ইহাতে সন্দেহ নাই।ইহারা মাতৃভাষা না জানা কে গৌরব মনে করিয়া অত্যন্ত খারাপ বাংলা এবং খারাপ ইংরেজি বলিত।কিন্তু এদেশে বিদেশি ভাষার মহিমা এমনই যে বিচারের অগ্রেই তাহার স্বর্ণপদক জুটিয়া যায়।আর তাহা লইয়া উহাদের হাস্যকর ভাবসাব দেখিয়া হাসিবার লোক পাওয়া যায় না। ধান ভানিতে শিবের গীত এই চৈত্র অবসানে না গাহিয়া উপায় কী।কিন্তু এদেশে চিকিৎসাবিদ্যা আয়ত্তে রাখিতে গেলে মেধার প্রয়োজন যে যথেষ্ট এ ব্যাপারে কাহারো কোনো সন্দেহ নাই।কিন্তু সন্দেহ তখনই আসিয়া পড়ে নামের পার্শ্বে যখন ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু খুঁজিয়া পাওয়া গেলেও কাজের সঙ্গে তাহার সংগতি পাওয়া যায় না।আর এইখানেই আসিয়া পড়ে টুল প্রসঙ্গ।এতোটুকু ঘর।রুগী বসিলে ডাক্তারকে দাঁড়াইয়া থাকিতে হয় এমন অবস্থা সেইখানে তিনি টুল পাতিয়া বসিয়া পড়িয়েছেন। তাও তিনি কীসের চিকিৎসা করিবেন? না মানুষের মনের মতো একটি জটিল বিষয় লইয়া।যাহার গাল ভরা নাম মনস্তত্ত্ব। ভিতরে টুল,বাহিরে টুল। চেম্বারের(চেম্বার !,তা বটে!)বাহিরে সারি দিয়া রোগী টুলে টলটলায়মান।অতএব সময় বরাদ্দ ওই,কন, কন,কন,কী হইসে,কী হইসে পর্যন্ত। কত সহজ সাধাসিধে মানুষ, কী অসীম বিশ্বাসে চোখ মেলে আছেন,কত মিথ্যা বুলি,বলি হইয়া নামিয়া আসিতেছে তাহাদের মস্তিষ্কে, হায় তাহা দেখিবার কেহ নাই।স্বাধীন ব্যবসায় ঊর্ধ্বতন না থাকিবার ফয়দা লুটিয়া গাঁ গঞ্জ মফস্বলে যাহা চলিতেছে তাহাতে দশচক্রে ভগবান ভূত হইয়া যাইতেছে। ওঝার সঙ্গে সাদা জোব্বার কোনো তফাৎ নাই। যে পেশার সঙ্গে নোবেল শব্দটি জড়িত সে স্থলে বেল পাকিলে বায়স কী করিবে বলিয়া চক্ষু মুদিয়া থাকিলে তো চলিবে না।কিন্তু এইসব ডিগ্রিধারী হাতুড়ে মনভাবাপন্ন চিকিৎকদের হাত হইতে সাধারণ মানুষ বাঁচিবে কী প্রকারে! অসুস্থ অসহায় মানুষের নিকট চিকিৎসক ঈশ্বর স্বরূপ। তাহারা যদি নাক কান কাটাইয়া খল নায়ক নায়িকা সাজিয়া বসেন তখন আর যাহাই হোক ধর্মের কল না নাড়াইয়া বাতাসের আর কিছুই করার থাকে না। আমি এককালে আমার ছোট্ট ছাত্র ছাত্রীদের শিখাইয়াছিলাম শহরের স্কুল হইলেই ভালো স্কুল ইহার মানে কী! তোমাদিগের বিদ্যালয় কেন ভালো স্কুল হইয়া উঠিবে না? ইহা তো তোমাদিগের হাতেই। উহারা ছোট বটে তবে বড় বুদ্ধিমান। উহারা তাহা প্রমাণ করিয়াই ছাড়িয়াছে।অথচ টুলো পন্ডিতের নামাবলি গায়ে চড়াইয়া কেহ কেহ সেই ধ্যানধারণা ফিরাইয়া আনিবার কাজে ব্রতী হইয়াছেন।


এখন প্রশ্ন উঠিতে পারে আমি চিকিৎসা বিদ্যার কী জানি যে এমন মন্তব্য করিলাম। বিশেষত আমার স্বভাবই এই যে কোনো ব্যাপারে না জানিয়া আমি কিছুতে মন্তব্য করিতে চাহি না।তাহা হইলে কেন করিলাম।ওই যে প্রথমেই বলিয়াছিলাম আমার পূর্বের লেখায় কিছু চুরির আভাস ছিল।এমনই এক অভিজ্ঞতা আমার হইয়াছিল বা বলা ভালো হইয়াছে।আমার গোঁফ গিয়াছে চুরি।গোঁফ কোথা হইতে আসিল? আজ্ঞে ওই চিকিৎসকের টুলো চেম্বার হইতে।চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকিলেও উহার পূর্ব পদ লোপ পাইলে যাহা থাকে তাহা সম্পর্কে কিছু জ্ঞান আছে। কতকিছু বলিবার ছিল আমার।কিছুই বলা হয় নাই। শুনিবার সময় অপেক্ষা গতানুগতিক প্রেসক্রিপশন লেখা সহজতর মনে করিয়া আমাকে ঠিক কী কী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করিয়া তুলিয়াছিলেন পূর্ব উল্লেখিত রামায়ণ চরিত্র সদৃশ্য এক চিকিৎসক তাহা বলিতে ইচ্ছা করিলেও লেখাটিকে ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র পরিসরে রাখিতে ইচ্ছা হইলো না বলিয়া স্রেফ তাছিল্যে তাহার নাম উল্লেখ করিলাম না। রবং চুরি এবং চৌর্যবৃত্তি প্রসঙ্গে চলিয়া যাইব একেবারে শৈশবে। তবে তাহাও অদ্য নহে। ফুল খেলিবার তরে আরও কিয়দকাল অপেক্ষা করিলামই নাহয়।
মনস্তাপের বিষয় এই যে এইভাবে না জানি কত মানুষকে পাগল প্রতিপন্ন করিয়া রাখা হয়।যেখানে যে দুর্বল সেখানে তাহার ঘাড়ে জোর করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হয় ছিটমহল, সেই তিন বিঘার ইতিহাস যাহার সঙ্গে আমার খোয়া খোয়া চন্দ্রের না মানে থুড়ি ওই চুরির ইতিহাসের কিছু সম্বন্ধ আছে বলিয়া আজ বোধকরি। ওই যে বলিলাম এইসব তথ্য আজ আমার নিকটও এতোটাই বিষ্ময়ের যে প্রাথমিকভাবে তা বিশ্বাসযোগ্য না লাগাটাই স্বাভাবিক। আমি সূত্র ধরিতে ধরিতে নিজেই চমকাইয়া উঠিতেছি।তা সে ব্যাঙের ঠ্যাংএ বিদ্যুৎ লাগিবার মতো কিনা তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। দুঃখের ব্যাপার এই যে কে বা কাহারা আমার ছাত্রীদের ও একসময় খেপাইয়া তুলিয়াছিল।তাহারা সর্বসময় আমাকে তাহাদের আজগুবি গল্প বা আত্মহননের প্রচেষ্টার কথা শুনাইয়া অতিষ্ঠ করিয়া তুলিয়াছিল।সত্য কাহারও পাশে দাঁড়ানোর হইলে শুধু আমি কেন কোন শিক্ষক শিক্ষিকাই কাল বিলম্ব করেন না।কিন্তু যখন বুঝিতে পারি কেহ তাহাদের সাজাইয়া গুছাইয়া উদ্যোগী করিয়া তুলিতেছে তখন হতবাক হইতে হয়।মাঝখানে তো আমার বিদ্যালয় পরিবেশ এতোটাই অশান্ত করিয়া তোলা হইয়াছিল যে আমার বিদ্যালয় চালানোই অসম্ভব হইয়া উঠিয়াছিল প্রায়।
যে কাজ একদিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করিয়াছি তাহাই যখন নাটকের অংশ মনে হয়, তাহাতে আমার আর কোনো উৎসাহ থাকে না। যাহা হউক আমার মতো সহনশীলতা সকলের থাকে না, সেকথা বঙ্গবাসী কেন বিশ্ববাসীর বোধকরি এতোদিনে জানা হইয়া গিয়াছে।কীভাবে সেসব দিন সামলাইছি বা বর্তমানেও সামলাইয়া চলিয়াছি সে আমিই জানি।একটা ভুল সময়ের মধ্যে দাঁড়াইয়া ওই বিপুল সংখ্যক ছাত্রীদের কী করিয়া ক্লাস করাইয়াছি ভাবিলে আমারই বিষ্ময়ের অন্ত থাকে না। মনে হইতো আমার মাথার উপর হুড়মুড় করিয়া ছাদ ভাঙিয়া পড়িছে অথবা পায়ের তলা হইতে মাটি খসিয়া যাইতেছে। একটি শ্রেণি কক্ষে পূর্ববৎ তিনটি বিভাগের শতাধিক ছাত্রী ভরিয়া দিয়া পড়াইতে পারিতেছি কিনা তাহা দেখা হইতেছে।যেখানে অতগুলো শিশু জানে যে তাহাদের শিক্ষিকা জানেন না ইহা বৎসরের শুরু না শেষ, এখন কোন পার্বিক পরীক্ষা ইত্যাদি। ( আমাকে কোনো প্রকারে ইহা জানিতে দেওয়া হয় নাই।)। অতএব ইহাতে তাহাদের শিশুমনে কী প্রকার চাঞ্চল্য দেখা দিতে পারে,আর সেই ক্লাস ম্যানেজ করিয়া শিক্ষিকার পড়াইতে কতখানি অপমানিত লাগিতে পারে বোধকরি যাহারা ইত্যাদি ঘটাইছেন তাহাদের মস্তিষ্কে তাহা প্রবেশ করে নাই।মনে হইতো যাহা জানি সব ভুলিয়া যাইতেছি।সে ভালোবাসাই হোক আর মজা,তাহাদের নিকট যে আমি একটি আজব বস্তুতে পরিনত হইয়াছিলাম বা হইয়াছি তাহাতে সন্দেহ নাই। প্রতিটি মুহূর্তে সৃষ্টি করা হইয়াছে এক আজব পরিবেশ। পরীক্ষার সময় সমস্ত ঘরের পরীক্ষা শেষ হইলেও আমার ঘরের পরীক্ষা শেষ হইতেছে না।সামান্য নম্বরের পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় অপেক্ষা বেশি সময় কেন দেওয়া হইলো জিজ্ঞাসা করিলে জানা যাইতেছে সবই উপরওয়ালার নির্দেশ। এই উপরওয়ালাটি কে তাহা জানিতে এত বৎসরের সরকারি চাকুরির অভিজ্ঞতার পর আর বেশি কিছু জ্ঞান প্রয়োজন হয় না।অতএব একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় শিক্ষাদপ্তরের প্রশ্রয় না থাকিলে এইসকল কার্য কিছুতেই করা সম্ভব হইত না। একটি শ্রেণিতে তো এমন হইলো প্রশ্নপত্রের উপরে কোন শ্রেণির পরীক্ষা তাহারই উল্লেখ নাই। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাইলে তাহারও জানাইলেন এর কোন সদুত্তর তাহাদের জানা নাই। আমার যুক্তি বলে আমি আর ওই বিদ্যালয়ের কেহ নই।কিন্তু তাহা আমাকে জানানো প্রয়োজন। এমন অনুমানও হয় আমাদের বিদ্যালয়টিরই হয়তো আর কোন অস্তিত্ব নাই।বহু বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়েরই পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটিয়াছে।এতে অবাক হইবার কিছু নাই। তাহা হইলে এই নাটক চলিতেছে কেন? ভাবিতে অবাক লাগে বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কেহ আমাকে কোনো রূপ দিশা দেখায় নাই কীভাবে আমি সমাধানের পথে আগাইতে পারি। এমনকি আমার পরম আত্মীয়, বন্ধু কেহ নহে।


নাটকের মানুষের উপর শিক্ষাদপ্তরের ভার থাকিলে যাহা হইবার তাহাই হইয়াছে। তিনি রজ্জুতে সর্প ভ্রম করিবার মতো বিদ্যালয়গুলিকে নাট্যাঙ্গন বলিয়া ভ্রম করিয়াছেন। হ্যাঁ নাটকও শিক্ষাদানের অতি উত্তম মাধ্যম বলিয়া আমি কেন যুগে যুগে বহু মহামানব স্বীকার করিয়াছেন।মহামান্য মন্ত্রী মহাশয়ের এব্যাপারে জ্ঞান অপার।তাঁহাকে লিখতে বলিলে তিনি এই বিষয়ে তিন পাতা ভরাইয়া ফেলিবেন সে আমি বিলক্ষণ জানি। কিন্তু মুশকিল হইলো ঝড় যে সব এলাকার উপর দিয়া যায় বিধ্বস্ত সে সব এলাকাবাসীই হন।আর যেখানে শিক্ষাদানের প্রসঙ্গ, প্রসঙ্গ মানব মনেরও, সেখানে ঠিক কতদিন ধরিয়া এইরূপ কিম্ভুত পরিস্থিতি তৈরি করিয়া রাখা যায়,কতদিন ধরিয়া রূপকথার নাম করিয়া শিশুদের মিথ্যা বলিবার শিক্ষা দেওয়া যায়,এটিকে ঠিক কী ধরনের অপরাধের মধ্যে গন্য করা যায় তাহা ভাবিয়া দেখিবার প্রয়োজন বহু আগেই ছিল।হয় নাই।একজন শিক্ষিকা বাঁচিল কী মরিয়া গেল তাহাতে কিছু না।নির্ভয়া কান্ডের পর দেশ উত্তাল হইয়াছিল,সরকার বদল হইয়াছিল,ব্যাস সব ঠিকঠাক হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু যে কথা সকলে জানিল যে বিদ্যালয়ে মিথ্যা বলিতে শেখানো হয়।শিক্ষিকাদের উপহাসের পাত্র করিয়া তোলা যায়,তাহার ফল কতদূর যাইতে পারে আমরা কী কখনো ভাবিয়া দেখিয়াছি।ভালো আমাকে সকল ছাত্রী বাসে।বরং একটু অধিকই বাসে।আজ নয়,চিরকাল। ওই তাহাদের লইয়া পাঠদানের সঙ্গে খানিক নাচাগানা,ভ্রমণ ইত্যাদি নানা সময় করিয়াছি,অধিক পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপন বিরতির মতো কিছু গল্পগাছা, এইসব কারণেই হয়তো। কিন্তু এর পরেও কিছু একটা ব্যাপার থাকে যাহাতে ব্যক্তিত্ব ধরা থাকে। অথচ কী হইতেছে,কেন হইতেছে এইসব না জানিতে পারিয়া সেই জায়গাটাতেই টাল খাইয়া যাইতেছে আমার।কোন দিন যে কাজ পারি নাই,শিক্ষাদান সংক্রান্ত কাজে ফাঁকি দিয়া কোনোক্রমে চাকুরি রক্ষা,তাহা করিতে গিয়া নিজের অন্তরে নিজে শেষ হইয়া যাইতেছি।রাজা মন্ত্রী হইলে যাহা সহজ তাহা তো সাধারণ মানুষের নিকট তত সহজ নহে। অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকারাই এখনো কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠ।
তবে দূর হইতে বহু মানুষ ইঙ্গিত ইশারায় তাহাদের ভালোবাসার কথা জানাইয়াছেন।তাহার জন্য তো সত্যই নৈকট্যের কোন প্রয়োজন নাই। তাই আজ আমার সবাই আপন,আবার সেই অর্থে একমাত্র সন্তান ছাড়া আর কেহই আপন নহে।
ইহাই হয়তো তাহার অপার করুণা। এইভাবেই তিনি হয়তো কাহাকে তাহার আপন করিয়া লন।সে যাহা হউক ব্যক্তি নয় হইতেছে সমষ্টির কথা।আর সেখানে
টুলো পন্ডিত আর ঝুলো মন্ত্রী মিলিয়া গেলে মঞ্চ জমিয়া যায় বটে কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্র ঝুলিয়া যায়,ইহাই চিন্তার।

১০
খই ফুটিতেছে

জগৎ পরিবর্তন হইয়াছে সত্য,কিন্তু তাহাতে তোমার কোনো ভূমিকা নাই।কী সত্য,কী মিথ্যা,কী নিত্য,কী অনিত্য তাহা বুঝিবার মতো জ্ঞানগম্যি তোমার নাই।তুমি যাহা লিখিতেছ তাহা তুমি লিখিতেছ না এই কথা বহু আগেই উচ্চারিত হইয়াছে।মানুষ যাহা করে তাহা সে আপন ইচ্ছায় করে না।তাহা ওই জীববিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি ঘাঁটিয়া ঘ ঘ করিবার নামমাত্র। তাহা হইলে দাঁড়াইলো অনুপাতই আসল খোদা।সঠিক,বেঠিক বলিয়াও কথা নহে, ব্যক্তি সর্বসময়েই বিশেষ। সমষ্টির আদিতেও যাহা অন্তে তাহা। কিন্তু খোদার ওপর খোদকারি করিয়া আমরা অনুপাতকে বিকারে ফেলিয়া জন গণ মন করিয়া ফেলিলাম। শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ সবসময়েই কাম্য। বৈচিত্রহীন সমাজ কখনোই কাম্য নহে। গোঁফ থাকুক না থাকুক গোঁফই যে আপনাকে চিনিয়া লইবার একমাত্র মাপকাঠি একথা অস্বীকার করিবার কোন উপায় নাই। বাটিতে চুমুক দিলে প্রতিপদের চাঁদের রেখা সেখানে ঝুলিয়া থাকিবেই। অথচ আপনারা মগজ ধোলাই করিয়া বেবাক ফাঁকা করিয়া ফেলিলেন।তারপর বলিলেন ফেলিনি,ফেলিনি।শুনেতেছি যন্ত্রের দৌলতে এখন যে কেউ যা কিছু করিয়া ফেলিতে পারিবেন।তাহা হইলে আর বিশেষ এর কোনো প্রয়োজন নাই।আমি যা পারি বলিয়া আপনি আপনার পরিচয় তৈরি করিয়াছেন অদূর ভবিষ্যতে তাহার আর কোন গৌরবই অবশিষ্ট থাকিবে না।একদিন,যেদিন প্রথম ধান চাষ করিতে শিখিয়াছিল মানুষ, তাহার কাছে সে ছিল অতি বিষ্ময়ের।আজ আর তাহা লইয়া কেহ আমোদ করে না। তবু তাহা সরাসরি ক্ষুধার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। তথাপি। আর যে জিনিস শুধুই বিনোদন তাহা লইয়া অহেতুক অত সময় নষ্ট করিবার কোনো প্রয়োজন নাই।তাছাড়া যা মজুদ আছে তাহা ঝাঁকাইলেই তো ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাচ তো দেখি বলিয়া হাত ঘুরাইয়া নেওয়া যায়।অতএব পাততাড়ি গুটাইবার সময় আসিল বলিয়া।কারণ কোনো জ্ঞান চর্চার আর প্রয়োজন থাকিবে না।সবই মেসিনে সংরক্ষিত। আপনি শুধু বোতাম দাবাইবেন।গাড়ি ছুটিবে রে রে করিয়া। আপনি বুঝিবেন কিন্তু কিছু করিতে পারিবেন না। দুনিয়া জুড়ে তখন হল্লা বোল। তাহা হইলে আপনি তখন কী করিবেন? কেন হাওয়া খাইবেন। আর এইখানেই আসিয়া পড়িল কোদাল চালাইবার প্রসঙ্গ। মোহিত না হইলেও আজও যেমন ধান বুনিতে হয়।কেননা ক্ষুধা এখনো বর্তমান। সেইরূপ কিছু মানুষ বিনা প্রয়োজনেও দেশ উদ্ধার করিবেন। মুশকিল হইলো যে আশিতে আসিও না এর মতো আমি আর চুরির প্রসঙ্গে আসিতে পারিতেছি না।হইতে পারে এটা আমার অভ্যাসে পরিনত হইয়াছে।কারণ দোনলায় দুলিতে দুলিতে যেভাবে মানুষের আরাম অভ্যাস হইয়া যায়।তেমনই কষ্ট, যন্ত্রণা,অনিশ্চয়তা, স্থবিরতা সবকিছুই মানুষের অভ্যাস হইয়া যায়।
প্রথমে ভাবিয়াছিলাম মোবাইল ফোনখানা পাল্টাইয়া ফেলিব। গৌরচন্দ্রিকা না করিয়া সরাসরি প্রসঙ্গ অবতারণা করিলাম।না হইলে আবারও আলাপের ভুলুভুলাইয়া তে আটকাইয়া পড়িব। কারণ এক আজব দুনিয়া আমি যাহা বলি,যাহা ভাবি,যাহা লিখি তাহাই বলে,তাহাই করে।বিজ্ঞাপনের ভাষা হইতে আমার চারপাশের মানুষ জন সবাইয়ের মুখে মুখে যেন আমারই ভাষা,আমারই ভাবনার খই ফুটিতেছে। আহা এমন চাঁদের আলো মরি যদি সেও ভালো। আমি তাহাতে মজাও পাইতেছি আবার কষ্টও পাইতেছি।কষ্ট কেন? কেননা আমি যা লিখিতেছি বা লিখিয়াছি ( ভাবিতেছিও! এই ব্যাপারে পরে বলিব বিস্তারে।) তাহা যদি এতোটাই সকলের প্রিয় হয় তবে তাহা তাহারা আমাকে জানাইবে না কেন? তাহা হইলে কী আমার মোবাইল ফোনখানা কাহারও হস্তগত হইয়াছে? তাছাড়া ব্যক্তি আমি আর আমার শিক্ষক জীবন এক নয়।লেখক সত্তায় ব্যক্তি আমি প্রকটিত হইলেও শিক্ষক জীবন কিঞ্চিৎ অন্যকিছু দাবি করে হয়তো। কিন্তু দেখিলাম ঠিক অন্য।যারা আমায় তুমুল ভালোবাসিয়াছে তাহারা বেশিরভাগ আমার ছাত্রছাত্রী বা ওইরূপ সব বালক বালিকা বা কিশোর কিশোরী। যুগ পাল্টাইয়া গিয়াছে।তাহারা যে মানসিকতায় এতোখানিই আধুনিক হইয়া গিয়াছে তাহা টের পাইতে আমারই বরং দেরি হইয়াছে।যেমন দেরি হইয়াছে বুঝিতে মোবাইল ফোন আমদানি হইবার বহু অগ্রে শুরু হইয়াছে এই চুরি পর্ব।এবং বুঝিতে দেরি হইয়াছে যে এই চুরি কিছু বৃহৎ এবং মহৎ উদ্দেশ্যেও (এটুকু আমার কষ্ট কল্পনা কিনা আজও জানিনা।তবে এই ভাবনা টুকুই আঁকড়াই বাঁচিয়া থাকি।না হইলে বাঁচিয়া থাকিতে পারিব না।) বুঝিবা। তাই আজ আর মোবাইল ফোন লইয়া ভাবিত নই। জানি ফোন পাল্টাইলেও সমস্যা সমাধান হইবে না।কারণ খোকাখুকুদের কারিগরি দক্ষতা যন্ত্রে সীমাবদ্ধ নয়। সমস্যা সমাধান সেই দিনই হইয়া গিয়াছে যেদিন সুতীব্র যন্ত্রণা হজম করিয়া সব কিছু অল্প অল্প করিয়া সিপ লইয়া আরাম পাইতে শিখিয়াছি। আর একটু একটু করিয়া আবিষ্কার করিয়াছি আমার জীবনটাই স্ক্রিপ্টেড। যাহারা ফোনভূমি পাইয়া কিঞ্চিৎ লাফালাফি করিয়াছেন তাহারা আমারই মতো অর্বাচীন। কিন্তু ওই এতোদিন পরে আমি যাহা সূত্র ধরিয়া আবিষ্কার করিব বলিয়া ভাবিতেছি তাহা হয়তো বহু পূর্বেই সকলে আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছেন।না হইলে কী গোটা একখানা রেলগাড়ি আমার জন্য আসিয়া দাঁড়াইয়া পড়ে! সূর্য চন্দ্র,আকাশ বাতাস সেসব প্রসঙ্গ না হয় এখন থাক। আভাসে ইঙ্গিতে সে কথা আগেই কিছু কিছু বলিয়াছি।সরসরি না হয় না-ই বা বলিলাম। আমি তো চিরকালই নিজেকে ক্যামেরার সামনে পিছনে দুদিকেই রাখিয়াছি।শুধু আমি না শিল্পী মাত্রেই তাহাই করেন। লেখক মাত্রেই তাহাই করেন। তাই জনগণের সঙ্গে আমারও সাধ হয় রূপকথা দেখিবার।ভূত বলিয়া কী তাহারা মানুষ নহেন যাহারা প্রতিদিন মরিতে মরিতে বাঁচিয়া থাকেন।এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে তাহারা রীতিমতো তাহা উপভোগ করেন।


ভাবিয়াছিলাম শৈশব হইতে শুরু করিব।কিন্তু পরে ভাবিলাম যাহা এখনো অকাট্য নহে আমার কাছে, এখনো সূত্র মিলাইবার খেলা,তাহা নাহয় পরেই বলি,যাহা সোজাসাপটা,প্রমাণিত তাহাই আগে লিখিয়া রাখি অশ্রু লেখায়।কারণ ইহা কোনো গল্প কথা নহে।অকাট্য সত্য।যদিও আমি মনে করি ধূসরতা না থাকিলে ভাষার মাধুর্য নষ্ট হয়। তাই আমার অমন সরাসরি কিছু বলিতেই ইচ্ছা করে না। কিন্তু এই কথাটি না বলিলেই নহে। আমি একটি সুবৃহৎ উপন্যাস লিখিয়া একটি খ্যাতনামা প্রকাশনা দপ্তরে জমা দিই বহু বৎসর আগে। আমার সঙ্গে আমার স্বামীও গিয়াছিলেন সেই পেটমোটা অতগুলো ফাইল টানিয়া। সে অনেক অনেক যুগ আগেকার কথা।যখন এক দেশে এক রাজা বাস করিত।গল্পটি প্রায় এইরূপে আরম্ভ করিবার কাল। মুশকিল হইলো এখনো বাংলা প্রকাশনা বাজারে লেখা জমা দিলে তার কোনো লিখিত দস্তাবেজ দেওয়া হয় না।সম্বল শুধুই ওই অগাধ বিশ্বাস। (এবং আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে এর আগে আমি ওই দপ্তরের কাহাকেও কোনো দিন চাক্ষুষ করি নাই।এমনকি ফোনালাপ পর্যন্ত না।শুধু ওই নামটার প্রতি এমন আস্থা ছিল যে জীবন উৎসর্গ করিয়া দিয়া চলিয়া আসিলাম।এর মধ্যে একবর্ণও মিথ্যা নাই।নাই কোনো রূপকল্প।ইহা প্রখর রৌদ্রের মতোই সত্য।) দীর্ঘ দীর্ঘদিন তাহা দপ্তরে পড়িয়া রইল।প্রায় সাত বৎসর কাল। আমি এক দুই বৎসর অন্তর একবার দপ্তরের ল্যান্ডলাইনে ফোন করিলে আমাকে জানানো হইতো যেহেতু তাহা অতি বৃহৎ আকৃতির তাই তাহা পড়িতে এবং সিদ্ধান্ত লইতে দেরি হইতেছে।অপেক্ষা করিতে শিখিলাম।প্রতীক্ষা কাকে বলে জানিলাম। অনন্ত কাল বলিতে ঠিক কী বোঝায় তাহা জানিলাম। তবে বসিয়া রহিলাম না।কাজ করিলাম।তুমুল কাজ।তখন বুঝি নাই।আজ যখন ফিরিয়া তাকাই তখন নিজেই আবাক হইয়া যাই, এত্তো লিখিয়াছি! সমস্ত পত্র পত্রিকায় লিখছি তখন। এমনও রবিবার তখন গিয়াছে এক সঙ্গে দুটি পত্রিকার রবিবাসরীয়তে গল্প কিম্বা কলাম।( তখন ধীরে ধীরে ওই প্রকাশনা সংস্থারই নিয়মিত বিভাগের অন্য দপ্তরের কোনো কোনো মানুষকে জানিলাম,বা চিনিলাম।কিন্তু বন্ধু মহলে শুনিয়াছিলাম ওই স্থলে নাকি অনেক গোষ্ঠী গত ব্যাপার। ব্যাপার ওরা,আমরার। যেহেতু দুটি বিভাগের অবস্তানও শহরের দুই প্রান্তে।আর আমি এইসব লবি ইত্যাদি কিছুই বুঝিতাম না।তাই কাহাকে বলিলে কিছু সুরাহা হইবে বুঝিতে না পারিয়া কাহাকেও আর কিছু বলিলাম না।চুপ করিয়া রহিলাম।আমি যে একটা উপন্যাস জমা দিয়াছি এই কথাটুকুও কাহাকে বলি নাই।ওই যে বিশ্বাস সমর্পণে কোনো দ্বিধা রাখিতে নাই।আর লেখা মানেই আমার কাছে তাহা ঈশ্বরের পায়ে নিবেদন।) হ্যাঁ তখন পুত্রের পড়াশোনা, স্কুল সবই চলিতেছে।তার উপরে আমার পুত্রের আজ এটা কাল সেটা,ডাক্তার বদ্যি,হসপিটাল,অপারেশন বারংবার। রাজার চরিত্র বদল হইল।পুত্রের পড়াশোনা এতো প্রাধান্য পাইলো যে আমার লেখালেখির কথা উচ্চারণ করাও সমস্যার হইয়া উঠিল। তখন একদিন ওই উপন্যাসের একটি সামান্য অংশ প্রকাশিত হইলো। সেই প্রুফও আমি দেখিয়াছিলাম লুকাইয়া। প্রথমে আমাকে বলা হইয়াছিলো উপন্যাসটি পুনরায় ছোট করিয়া লিখিয়া দিতে।আমার পক্ষে তাহা অসম্ভব জানাইলে কিছু অংশ প্রকাশিত হইলো। অঙ্গচ্ছেদের যন্ত্রণা লইয়াও তাহা ছিল আমার কাছে এক অপার্থিব আনন্দ। বাকি অংশ ফেরত দিয়া জানানো হইলো পরে কখনো ভাবা যাবে।আবারও অপেক্ষা। ভাবিয়াছিলাম একদিন আনন্দ করিয়া সকলকে এইসব কথা বলিব। ঠিক যে ভাবে সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হইলে মা পড়শির মুখে রসগোল্লা গুঁজিয়া দিয়া বলেন,ওহ্, কী যে জ্বালাইয়াছে আমায়। তাহা হইলো না।কতকিছুই হয় না। বরং আশ্চর্য হইয়া দেখিলাম তার কিছুদিন পর হইতে আমার উপন্যাসের অপ্রকাশিত (আমি তাহাই জানি)বাকি অংশ লোকের মুখে মুখে ফিরিতেছে।এর মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিল। যাহার উল্লেখ আজ আর আমি করিতে চাহি না।কারণ তাহা এতোটাই অপ্রীতিকর যে তাহা বলিয়া আমার লেখকবন্ধু এবং প্রকাশকদের ছোট করিতে মন চাহে না। আমার অনুমান এই সময় ছোট বড় কিছু গোষ্ঠীদ্বন্দের শিকার হইয়াছিলাম আমি। এছাড়া উপন্যাসের নাম লইয়াও নানাবিধ কনফিউশান তৈরি করা হইয়াছিল।পরে অন্য প্রমাণে বুঝিয়াছি সবটাই ইচ্ছাকৃত। অনুমানের ভিত্তিতে দোষারোপ করিতে চাহি না।তবে ঘটনা যে ঘটিয়াছিল ইহা সত্য।এখন বুঝি তাহাও আমাকে অসুস্থ করিয়া তুলিবার একটি প্রয়াস মাত্র।
আমি অসুস্থ হইনি।অসহনীয় হইয়াছে আমার জীবন, তথাপি দাঁতে দাঁত চাপিয়া লেখাকেই আঁকড়াইয়া থাকিয়াছি।কত ঘটনা শুনিতাম দপ্তর হইতে গল্প চুরি হইয়া যায়,ইত্যাদি। বিশ্বাস করি নাই।আজও করিনা।ঘটনা বা প্লট চুরি হইতে পারে।কিন্তু ঘটনা বা প্লটই উপন্যাস নয়। তেমন ভাবে দেখিতে গেলে নতুন কী আর কিছুই আছে।লিখন শৈলীই একজন লেখককে অন্য লেখকের থেকে পৃথক করিয়া তোলে।তবে এইসব মানসিক টানাপোড়েন সইতে সইতে নিজের পদক্ষেপের খানিক বিড়ালত্ব প্রাপ্তি ঘটে। এই যা। যা বিশ্বাস করিতে গেলে অসুস্থ হইয়া পড়িতে হয়,তাহা না-ই বা বিশ্বাস করিলাম।বরং উহা বিশ্বাস না করিবার সপক্ষে যুক্তি সাজাইয়া বাঁচিয়া থাকাই তো শ্রেয়। ধর্ম বলিয়া আদৌ কোনো বস্তু আছে কি না জানিনা তবে মানুষ তার আপন ধর্ম বিচ্যুত হইবে সে বিশ্বাস এখনো হয় না।
হ্যাঁ যা বলিতেছিলাম।মোবাইল ফোন বদলাইবার কথা।আমার টেকনলোজির জ্ঞান প্রায় নাই বলিলেই চলে,দায়ে না পড়িলে আমি কোন কাজই করি না। সেকথা আমাকে যাহারা কাছ হইতে (এখানে ভৌগোলিক দূরত্বের কথা বলিতেছি না।কারণ আক্ষরিক অর্থেই তিন ইঞ্চি দূরে থাকিয়াও একজন মানুষ আর একজন মানুষকে কিছুমাত্র না চিনিতে পারেন বা চিনবার চেষ্টা করিবার কোন প্রয়োজনই না অনুভব করিতে পারেন।) দেখিয়াছেন তাহারা খুব ভালো করিয়াই জানেন।কিন্তু দায় পড়িলে তাহা যেকোনো প্রকারে শিখিয়া লইতে চেষ্টা করি।আন্তরিক ভাবেই করি।কিন্তু দায় না লইয়া যতক্ষণ হইয়া যায় আমি ততক্ষণ সেই পথই অবলম্বন করি।এমনই স্বভাব আলস্য আমার। আসলে লেখালেখি ছাড়া আর কোনো কাজকেই আমার কাজ বলিয়া মনে হয় না। তবে নতুন নতুন কিছু কাজ বা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া যাইতে আমার ভালোই লাগে,কারণ লেখারই উপাদান হিসাবে তাহা আমার নিকট গৃহীত হয়। তাই প্রথম প্রথম যখন ওই আমার উপন্যাসের অপ্রকাশিত অংশের সঙ্গে আমার জীবনের কিছু অংশ মিলাইয়া হইচই হইতেছিল তখন আমার মনে হইয়াছিল আমি ফোনে যাহা লিখি কিম্বা বাড়িতে যা কথা বলি তাহা সকলে জানিবে কী প্রকারে। পরে আমার নিকট খুব দ্রুতই স্পষ্ট হইলো আমি যাহা লিখিয়াছি বা যাহা লিখিতেছি শুধু নয় যাহা বলিতেছি,করিতেছি,পরিতেছি( র লক্ষণীয়) সমস্তটুকুই সকলে অনুসরণ করিতেছেন। এবং সর্বোপরি আমি যাহা ভাবিতেছি তাহাও। আর এইখানেই আমার কষ্ট দ্বিগুণ, তিন গুণ, চতুর্গুণ বাড়িয়া গেল। মস্তিষ্কে যদি কোনো অনুবিক্ষণ যন্ত্র,বা দূরবীন বা যাহা হউক কিছু হইবে,কোন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্ক্যানার লাগাইলে মস্তিষ্কের সকল ভাবনা চিন্তা দৃশ্যমান হয় তাহা তো আমি জানিনা।আমি না পড়িয়াছি চিকিৎসা বিদ্যা না টেকনোলজি। পড়িয়াছি ভূগোল। তাহাও সেই সময়কালে যখন এই বিষয়টির সঙ্গে এখনকার মতো টেকনোলজির সেভাবে সংযুক্তিকরণ ঘটে নাই। ফলে দিনের পর দিন স্বীকৃতিহীন এক অসহনীয় দৃশ্যমানতায় আমার মধ্যে জন্ম নিয়াছে এক অদ্ভুত কনফিউশন। যে জিনিসে দুর্বলতা ছিল সামান্য। যা প্রায় স্বাভাবিক। সকল মানুষেরই থাকে।বাংলামাধ্যমে পড়া মোটামুটি সাধারণ মানের মেয়েদের, তাহাই অস্বাভাবিক আকার ধারণ করিল।সবেতেই মনে হইতে লাগিল বুঝি ভুল করিতেছি।এই বুঝি ভুল বানান লিখিয়া ফেলিলাম, এই বোধহয় ইংরেজি পড়িতে পারিলাম না। সবচেয়ে বড় কথা আমি তাহা বুঝিতে পারিতাম বা পারি।ফলত আমি যখন দেখিতাম আমার ভুল বানান লইয়া পরদিন সকালে বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন তৈরি হইতেছে,সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট লেখা হইতেছে সেই বানান অনুসরণ করিয়া তখন আরও ভঙ্গুর হইয়া উঠিল আমার মনের গতিবিধি। যাহা জানি তাহাও আর পড়িবার চেষ্টাই করিতাম না।এড়াইয়া যাইতাম। আর তখুনি বুঝিলাম ফোন একটি সামান্য জিনিস,উহা বদলাইয়া কিছুই হইবে না।বিজ্ঞানীর গবেষণাগারে যাহা সুসিদ্ধ হইতেছে তাহা নতুন ফোনের সঙ্গ জুড়িতে দুমিনিটও লাগিবে না।তাছাড়া মনে হইলো যাহারা দিন রাত এত সংকেত পাঠাইতেছেন, আমার নিকটজন, তাহার কি সাংকেতিক ভাষাতেই বলিতেন না অনিন্দিতাদি,এইবার তোমার মোবাইল ফোনখানা পাল্টাইয়া ফেলো,বহু পুরনো হইয়া গিয়াছে। সংকেত রিসিভ করিতেছে না! তাই ফোন ত্যাগের ইচ্ছা ত্যাগ করিলাম।


আরও যাহা ত্যাগ করিলাম তাহা হইলো সংস্কার। ট্যাবু।
এক্ষণেও বুঝি ডাক্তারবাবুদিগের বুঝিতে কিছু ভুল হইয়াছ, যাহা আমার কোনো কালেই ছিল না তাহা নতুন করিয়া ত্যাগ করিব কী।আমি গৃহ পরিবেশে বা আপাতভাবে যতটাই নিরীহ কলম হাতে লইলে ঠিক ততটাই সাহসী। অযথা এই অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে তাহারা আমাকে না ফেলিলেও পারিতেন।আমাকে সুস্থ করিবার আছিলায় এতো আরও ভয়ংকর রূপে অসুস্থ করিবার শামিল। রীতিমতো সুস্থ মানুষ কে ব্যস্ত করা যাকে বলে! এতো দীর্ঘদিন ধরিয়া এই আজব পরিস্থিতির মধ্যে থাকিয়া স্কুল করিয়াছি,পড়াইয়াছি,খাতা দেখিয়াছি উচ্চমাধ্যমিক স্তরের,যেখানে জোর করিয়া আমাকে জানিতে দেওয়াই হয় নাই ইহা কোন মাস,বৎসর,কোন দিন ইত্যাদি।জোর করিয়া সৃষ্টি করা হইয়াছে কনফিউশান।সংকেতে সংকেতে ভাষা সৃষ্টির পূর্ব অবস্থার গুহামানব করিয়া তোলা হইয়াছে। সেইরূপ পরিস্থিতির মধ্যে থাকিলে কোনো চেতনা সম্পন্ন মানুষ এতদিনে শীর্ষাসনে হাঁটিতেন। চেতনারহিত অসার মানুষের কথা অবশ্য আলাদা। মাকাউয়ের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সই হোক,ডাক্তারের গবেষণাগারই হোক,বা দুইয়ের অপূর্ব (!) মেলবন্ধনই হোক, সে সুযোগ সকলেই লইয়াছেন।কেবল অপারেটর থেকে রংমিস্ত্রি।ভাবিতে অবাক লাগে সকলেই তাহা জানিতেন, উচ্চশিক্ষিত আমাদের বন্ধু মহল হইতে আত্মীয়পরিজন। কেহই তাহা আমাকে বলিয়া সাহায্য করেন নাই। যদি সত্যি একদিন সামনে আসে ঠিক কোন কোন প্রসঙ্গে কাহার চোখ দেখিয়া এবং সংকেত অনুধাবন করিয়া বুঝিতে পারিয়াছি তিনি সবই জানেন,তাহাও বলিয়া দিতে পারিব।অথচ কোনোভাবেই কিছু মানিতে না চাওয়া চেতনারহিত মানুষদের সেই চেতনারহিত অবস্থাকে উৎসাহ দিয়া কেহ কেহ তাহাদের বন্ধু সাজিয়াছেন।বলেন নাই রাজা তোর কাপড় কোথায়।


তাহা হইলে সূত্র নাম্বার ওয়ান এন্ড টু এতোক্ষণে পরিস্কার হইল। যেখানে অনুমানের কোনো স্থান নাই।পুরোটাই প্রমানিত। এবং চুরি প্রসঙ্গে অনুমতির প্রশ্ন ওঠে না।তাই অবান্তর অবতারণা করিলাম না। ইত্যাবসরে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও মধ্যে কেহ কেহ যেন মুখ ব্যাদান করিয়া বসিয়া রহিল।আমি যাহা জমা দিই তাহা সে তাহারা আমন্ত্রণই জানাক বা আমিই দিই সব সেই হাঁ মুখে সিঁধাইয়া যায়। আলো দেখিবার আগেই গায়েব।আবার কেহ মুখ খুলিলই না।( হ্যাঁ তবে এরই মধ্যে দু’একটা অবশ্যই লিখিয়াছি।)হটাৎ করিয়া কেন এমন আরম্ভ হইলো তাহা আমার অজানা।তাহাদের যেন মনেই পড়িল না তাহারা আমাকে দিয়া এক সময় কতকিছু লিখাইয়াছেন। নিজে উপযাচক হইয়া বলিয়াছেন ‘আপনার লেখা আমাদের দপ্তরের সকলের খুব ভালো লাগিয়াছে।আপনি আরও অনেক লিখিবেন।’ কোট করিলাম বটে কিন্তু তিনি চলিতে বলিয়াছিলেন।।নাম বলিলাম না।যাহার কথা তাহার নিশ্চয়ই মনে আছে।কিম্বা এমন ভুলে যাওয়াটাই দস্তুর। কারণ স্কুল সংসার সব সামলাইয়া অকারণে দপ্তরে গিয়া বসিয়া থাকা আমার সম্ভব হয় নাই।আর অনাবশ্যক ফোন করিতেও আমি খুবই সংকোচ বোধ করি। ফলে অনলাইন পত্রিকায় ধীরে ধীরে লিখিতে আরম্ভ করিলাম।প্রথমে আমি ভাবিতাম ওয়েবজিনে লিখিলে প্রিন্ট টিকিবে কী করিয়া। বহুদিন পর্যন্ত আমি মুখ ফিরাইয়া ছিলাম। কিন্তু পরে দেখিলাম হয়তো ইহাই ভবিতব্য।
এইবার আসি শৈশব প্রসঙ্গে। তাহার আগে একটি কথা বলিয়া লইতে চাই।কেউ প্রশ্ন করিতে পারেন আমি সব বুঝিয়াও কেন কোনো আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবি নাই।ভাবি নাই এই কারণে যে আমার পাশে দাঁড়াইবার মতো কেহ ছিল না।প্রাথমিকভাবে কেহ আমাকে বলিয়া দেয় নাই আমি ঠিক কী করিতে পারি। যাহাকে নিজের বইয়ের প্রুফ লুকাইয়া সংশোধন করিতে হয় তাহার লেখাকে গুরুত্ব দেবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আর আমি নিজে তৎপর হইনি কেন? কারণ আমি ক্রমে বুঝিতে পারিয়াছিলাম এ অনেক বৃহৎ ব্যাপার। আমি লড়িব তাহা আমার সাধ্য কী। আর সর্বপরি সেই অবিস্মরণীয় ভালোবাসা,যাহা আজিও আঁকড়াই আছি। নিছক প্রতিষ্ঠান হইলেও যাহা প্রিয় তাহার বিরুদ্ধে কী আঙুল তোলা যায়? জীবন বিপন্ন হইলেও? সংসারেই কি পারিয়াছি? তাছাড়া কার কার বিরুদ্ধেই বা অভিযোগ জানাইব। পরে তো ঘর হইতেও উধাও হইয়া গিয়াছে হাতে লেখা গোটা দুই উপন্যাসের পান্ডুলিপি। যার একটার পরে জেরক্স পাইয়াছি।আর একটির তা-ও না। তার পরেও আমি মরিয়া যাই নাই। বরং ঠা ঠা রোদ্দুরে রেল কামরায় বসিয়া ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি শুনিয়া ঠ্যাং নাড়াইয়াছি। তবে সেই উপন্যাস দুটি সম্পূর্ণ না হইলেও কিয়দংশ একটি পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত হইয়াছিল যখন তখন তা নিশ্চয়ই পত্রিকা দপ্তরে সংরক্ষিত আছে আশা করা যায়।আমি অভিমান করিয়া তাহার আর খোঁজ করি নাই।
সূত্র আরও অনেক পাইয়াছি শৈশব প্রসঙ্গে। সকলই বলিব ভাবিয়াছিলাম।কিন্তু সকলই এখন বলিব না। সেই বৃহৎ উপন্যাসের তৃতীয় অংশও লিখিতে আরম্ভ করিয়াছিলাম। সাধ জাগে তাহা নতুন করিয়া লিখিব। বা একেবারেই অন্যকিছু। আশা রাখি উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশও প্রকাশিত হইবে বা যাহা প্রকাশিত হইয়াছে হয়তো কোন অজ্ঞাত কারণে আমি জানিতে পারি নাই, তাহা একদিন জানিতে পারিব। তাই শুধু সেটুকুই বলিয়াই এই লেখা শেষ করিব যাহা ইতিমধ্যেই বেশ পরিস্কার। লেখার মধ্যে আমি যে সব সূত্রগুলো লিখিয়াছি বা লিখি নাই।অথচ আজ তাৎপর্যপূর্ণ মনে হইতেছে। পূর্বে লিখি নাই তাহার কারণ আমি সম্পূর্ণই আমার গল্প লিখি নাই।চারপাশের দেখা মানুষজনের গল্পও চরিত্রের সঙ্গে অবলীলায় জুড়িয়া দিয়াছি আর বহু কিছু অদলবদলও করিয়াছি।কাহিনিকে কাহিনির অনুরূপ করিয়া তুলিবার জন্য যা করিবার প্রয়োজন বোধ করিয়াছি তাহাই করিয়াছি।
কিন্তু শৈশব হইতে বারংবার বহু জিনিস অতি অদ্ভুত ভাবে চুরি হইয়াছে আমার। কখনো আমার বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চুরি হইয়াছে গিয়াছে। পরীক্ষা পিছাইয়া গিয়াছে তিন মাস। কিম্বা মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বে ঘর হইতে রাত্রে জানাল দিয়া চুরি হইয়া গিয়াছে আমার সমস্ত বই! এবং চোর আর কিচ্ছু চুরি করে নাই! অবাক হইবার মতোই ব্যাপার নয় কি?তখন টেস্ট পেপার ছিল নবম দশম শ্রেণির একসঙ্গে। এইমোটা।আর তা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তৎক্ষনাৎ সংগ্রহ না করিলে আর পাওয়া যাইত না। চুরি হইবার পর মাথায় হাত।কী করিব।কোথায় পাইব এখন তাহা।বইপত্র পুনরায় কিছু সংগ্রহ হইলো, তথাপি বৎসরের ওই সময় তাহাও মুশকিল। কিন্তু টেস্ট পেপার তো কিছুতেই সম্ভব নহে। আমার জন্য আমার মামা তাহা পুনরায় কষ্ট করিয়া সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছিলেন।কিন্তু তাহা গোটা নয়। দ্বিখণ্ডিত। এবং ব্যবহৃত। তখন তাহাতে কেবল মাত্র বিরক্তি লাগিয়াছিল।এখন পরিকল্পিত এবং তাৎপর্যপূর্ণ লাগিতেছে।
কখনো এক্কেবারে শৈশবে ইংরেজি নাটকে একটাই মাত্র ডায়ালগ বলিয়াছি,ফলো মি! মাস্টার্স এ আমাদেরই বৎসরে অন্য সব স্পেশাল পেপার পড়ানো বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল যাহাতে আমরা ওই ক’জন সকলেই ট্যুরিজম স্পেশাল লইতে বাধ্য হই। এই যুগেও আমার বিবাহের দিন ডাকাত পড়িয়াছিল বাড়িতে! আমার বিবাহ দেন নবকুমার কাকু! এত্তো ফ্রেমে আঁটা জীবন কি সত্যিই হয় নাকি কেহ তৈরি করিয়া দিয়াছিল এই জীবন আমি লিখিব বলিয়া। আরও আছে। আমার বাড়ির নাম,নম্বর, ঠিকানা,আমার জন্মদিন,তাহার সঙ্গে আমার জীবনে ঘটা অসংখ্য ঘটনা। প্রথমে খেয়াল করি নাই।পরে মনে হইলো কাকতালীয়। তারপর দেখিলাম অসম্ভব। এত্তো কাকতালীয় হইতে গেলে ঝুট বলিয়া কাউয়া কাটিবে। এ তো নিখুঁত গণিত!


সব বলিব না। জীবন দেখিয়া লই আরও বহু বৎসর তারপর লিখিব অবশেষ।হ্যাঁ আমার উপন্যাসের তৃতীয় খন্ডের নাম।যা আমি ভাবিয়া রাখিয়াছি বহু আগে।এবং অবধারিত ভাবে তাহা আমার মস্তিষ্ক হইতে চুরি হইয়া গিয়াছে আমি টের পাইয়াছি।তবে বড়বাবুর গোঁফ হারাইয়াছিল আর আমার তো খুলিই উড়িয়া গিয়াছে। আমি লিখিব কী প্রকারে?একটা উপন্যাস লিখিবার জন্য যে নির্জনতা একান্ত কাম্য! আশা করা যায় আমি ততদিন বাঁচিয়া থাকিব, এবং মহামান্যদের গবেষণার কাজও সমাপ্ত হইয়া যাইবে। যুগ পাল্টাইয়াছে।বিয়োগান্ত চিত্রনাট্য আর লেখা যাইবে না কোনো মতে।ভঙ্গুর এই সময়ে মানুষের কাঁধে হাত রাখা খুব জরুরি।
গুরুগম্ভীর কথার শেষে মিষ্টিমুখের ন্যায় কিঞ্চিৎ হাস্যরস। আমার লেখা সর্বত্রগামী হইয়া বিপদ যে আমার কী প্রকার হইয়াছে তাহা আর বলিয়া শেষ করা যায় না। রাতে যদি লিখিয়া ঘুমাইতে যাই, লেখাটি সুসিদ্ধ হয় নাই। এখনো কিছু ঠিকঠাক করিতে হইবে বা ইচ্ছাকৃত অসম্পূর্ণ রাখি পরে লিখিব বলিয়া, পরদিন আমার রান্নার দিদিও অর্ধ সিদ্ধ রান্না নামাইয়া দিয়া বাড়ি চলিয়া যায়। খাইতে বসিয়া মাথা গরম হইলে, তাহাকে পরদিন অভিযোগ জানাইলে সে মৃদু হাসিয়া তুখোড় অভিনেত্রীর মতো মুখ করিয়া বলে, কই কাঁচা? পছন্দ না হইলে নতুন লোক দেখিয়া নাও। পৃথিবীটা বাস্তবিকই রিভলবিং মঞ্চ হইয়া উঠিয়াছে বটে। প্রায় কাঁচা সবজি কচমচ করিয়া চিবাইয়া গিলিয়া ফেলিয়াও মনে মনে পরিতৃপ্ত হই,দেশ সুশিক্ষিত হইতেছে বলিয়া। বুঝুন!এতো হাত ঘুরাইলে নাড়ু দিব,নইলে নাড়ু কোথায় পাইব অবস্থা।

১১
শেষ নাহি যাহার তাহাই পুনশ্চ


আমি অনেকটা ওই পরাজিত পুরুর মতো।সব চলিয়া যায় তবু অহংকার যায় না। আছেই তো অহং টুকু। সেইটুকুও যদি বিসর্জন দিই তবে আর রইল কী। অনেকে বলিতে পারেন পিদিমের তৈল সমাপ্ত হইলে তাহা দাউদাউ করিয়া ওঠে। বলিতেই পারেন। তবে চকমকি পাথরই হোক আর দাবানল,জ্বলিবার যে,সে জ্বলিবেই। ভাবিয়াছিলাম এই ধরনের লেখা আর লিখিব না।কিন্তু দুচারটি কথা বাকি রহিয়া গেল।তাই আবার বলিতে হইতেছে।সত্য বলিতে কী, কিছুদিন হইতে ওই সমগ্রের চিন্তা মাথায় ঘুরিতেছে। ফুরাইয়া আসিবার পূর্বের লক্ষ্মণ হয়তো। ভাবিতেছি একটি পূর্নাঙ্গ লেখক জীবনে সব ধরনের লেখা লিখিয়া যাওয়া উচিৎ। শুধুমাত্র নাটক আর কাব্যনাট্য ছাড়া আমি আর সব ধরনের লেখাই লিখিয়াছি।নাটক আলাদা করিয়া লিখিব না।কারণ আমার প্রায় সব লেখাকেই নাটকে রূপ দেওয়া যাইতে পারে।কিন্তু কাব্যনাট্য লিখিতে ইচ্ছা করিয়াছে বহুবার। তবে এখনো ধরা সে যে দেয় নাই,দেয় নাই। আর আমি তো কোন লেখাই বানাইয়া লিখিতে পারি না।সে দেখা যাবে খন।যখন আসিবেন তখন তাহাকে জল বাতাসা দিয়া আদর করিয়া বসাইব। শীতল পাটি বিছাইয়া দিব।
হ্যাঁ যে কথাটুকুর জন্য পুনশ্চ প্রস্তাবনা। সাত বৎসর ধরিয়া একটি লেখা লিখিয়াছিলাম।আরও সাত বৎসর অপেক্ষা করিয়া রহিলাম তাহা প্রকাশ হইবার জন্য।তাহারপরও তাহা প্রকাশিত হইলো অর্ধাংশ। এরপরের অপেক্ষাটুকু আমার মানসিক স্থিতিকে লইয়া গেল অনন্তে।মানুষ তো সহজে মরে না।তার বাঁচিবার সাধই যে অনন্ত। তাই কোনো মৃত্যুই আত্মহত্যা নয়,হত্যা বলিয়াই আমার মনে হয়।আর ঠিক এই কারণেই, শুধুমাত্র এই কারনেই এখনো লিখিয়া যাই।অবিরত, অবিরাম লিখিয়া যাই সেইসব মানুষজনদের জন্যে যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করেন বাঁচিয়া থাকার। লিখিয়া যাই জানান দিতে নিজেকে নিংড়ে বাঁচিয়া থাকাটাই বাঁচিয়া থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য। আর কোনো উদ্দেশ্য নাই। হ্যাঁ এর পরেও টলমল করিতে করিতেও একবার ঝাঁপ দিয়াছিলাম আমি লিখিবার কাজে।মনে হইলো এমন একটা উপন্যাস আমি লিখিব,দেখি কী করিয়া এইবার তাহা কেহ ফেরায়। তাছাড়া মানুষ তো সবার আগে চায় নিকটজনের স্বীকৃতি। তথাকথিত বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়া এই স্বীকৃতি তো প্রায় অসম্ভব। খুব সঠিক করিয়া বলিতে গেলে সর্ব বিচারই তো হয় অর্থমূল্যে। তাই আরও একটি ছোট্ট কথার ছোট্ট খোঁচাও আমাকে তাড়িত করিয়াছিল এমন একটি উপন্যাস লিখিতে যাহা কোনো ভাবেই আর কাহারো অস্বীকার করিবার কোন উপায় থাকিবে না।( যদিও উহা উপলক্ষ্য মাত্র।এর বহু পূর্ব হইতেই ওই লেখা আমার মাথায় ঘুরিতেছিল,যেইরূপ ওই বৃহৎ উপন্যাসের শুরু বলা যায় সেই শৈশবে, প্রায় স্মৃতি মাথায় ধরিয়া রাখিবার ক্ষমতা শুরু হইবার কাল হইতে।)কিন্তু তাহার পরও ঘটিয়াছিল প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তারপর হইতেই সবকিছু কেমন তালগোল পাকাইয়া গেল আমার। থেঁতলাই যাওয়া রক্তমাংসের একটা পিন্ডের মতো। তবে যিনি আমাকে এমন আজব প্রকৃতির করিয়া গড়িয়া তুলিয়াছেন, রক্ষা করিবার দায়ও তিনিই তুলিয়া লইয়াছিলেন। তাই আজও স্থির দাঁড়াইয়া আছি।প্রভু তোমার লাগি।
যদিও সেই লেখা আমার অন্য দেশে পরে বই আকারে প্রকাশিত হইয়াছে।মানুষের ভালোবাসা পাইয়াছে। ধারাবাহিক প্রকাশিত হইয়াছে অন্য উপন্যাস। আর এইসব ভালোবাসাই আমাকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছে।তবে আমি আজও মনে করি প্রকৃত লেখালেখি একক এবং নির্জনের।সেই করনেই তো এত বছরেও সভা সমিতি দল এইসব ঠিকমতো করিয়া উঠিতে পারি নাই।হ্যাঁ, উদযাপন অবশ্যই সমবেতর।
তাই আজ মনে হয় কী বা প্রয়োজন এই অপরিসীম কষ্টের আহ্বান করিবার। রুজি রোজগার ভিন্ন এ কেবল শখের উপাদান হইয়া থাকাই তো শ্রেয়। জীবনের সঙ্গে তাহাকে জুড়িবার কোনো প্রয়োজন নাই।কারণ এই বিপুল ধাক্কায় বাহিরে নিটোল থাকিলেও ভিতরে মানুষ কতখানি ভঙ্গুর হইয়া যায় তাহা তো কেবল যাহার যায় সেই জানিতে পারে।নয় কি?আমার কথা অবশ্য আলাদা। আমার ক্ষেত্রে তাহা ছিল প্রায় নির্ধারিত এবং অবশ্যম্ভাবী। কারণ ঠিকমতো বোধ হইবার পূর্বেই দাদামশাইয়ের নিকট বসিয়া উপলব্ধি করিয়াছিলাম জগতে যাহাই শুনিতেছি তাহাই আমাকে লিখিয়া যাইতে হইবে। তাই আমার জীবন আর লেখাকে আলাদা করিতে পারিলাম না কোনো মুহূর্তেই।পুনশ্চর মধ্যেই রহিয়া গেল প্রারম্ভের সম্ভাবনা।

১২
চোখের আলোয়


কাহারা কি করিল আমি জানিনা।আমার জীবন লইয়া ছিনিমিনি খেলিয়া কাহার কী বা লাভ হইলো তাহাও আমি জানিনা।তবে আজ বোধ হইতেছে আমার মোক্ষ লাভ হইলো। আমি চিকিৎসা করাইতে আসিয়াছি নাকি দিব্যদৃষ্টি লাভ করিতে আসিয়াছি আমি জানিনা। কিছু একটা হইলো।আমার…
পাগলের অমন হাভভাব না দেখিলে লোকের আমোদ হইবে কেন? সেই কবে রাজকাপুর তারও আগে তিনি যাকে গুরু মানিতেন সেই কিংবদন্তি তাহারা যা সব করিয়া গিয়াছেন সেখানে শিশু কেন সকলেরই রাস্তাঘাটে সুলভ দরকার হয়।একথা আমি আগেও বলিয়াছি।যাহা হইতেছে তাহা পরম আশ্চর্য। ঠিক কত খানি আশ্চর্য তা আমার কল্পনার অতীত হইলে সমস্যা ছিল না।কিন্তু তাহা আমার কল্পনার বিস্ফোরণ ঘটাইতেছে। আধার অপেক্ষা কোনো বস্তুরই আকৃতি বড় হইলে তাহা চিন্তার বিষয়। শরীর অপেক্ষাও। আমি এমন হরিণ শিশু হইয়া নাচিয়া বেড়াইতেছি যাহা দেখিয়া আমারই বিস্ময় লাগিতেছে।আমি চিরকালই নাচুনে এবং নাটুকে।এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।কিন্তু আমি কল্পনাও করিতে পারি নাই সকল মানুষ একদিন আমার সঙ্গে এইরূপ নাচিয়া উঠিবে।হরি নাম নিয়ে জগৎ মাতিইয়াছিলেন যিনি বা যাহারা তাহাদের ত্যাগের ওই বিশালত্বের কণা মাত্র ক্ষমতা আমার নাই।আছে শুধু এক দুরন্ত আবেগ যাহা অপ্রতিরোধ্য। তাহা বুঝি আজ আর কাহারও জানিতে বাকি নাই। কিন্তু মানুষের এই বিপুল সম্মিলিত আবেগ আমাকে যেন ফুলাইয়া,ফাঁপাইয়ে, ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছে। এই কিংবদন্তি দ্বৈত সত্তার ভারে মাথা ফাটিয়া যাইতে চায় মাঝে মাঝে। তথাপি এই অপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি করিয়া আমি অবলীলায় খেলিতে পারিতাম যদি আমি তাহার আভাস পাইতাম। আমারই জগত মাঝে আমি হারা হইয়া না থাকিতে হইতো।


নিতান্ত কৌতুক করিয়া যাহারা প্রাথমিক ভাবে আমার টিকি (পড়ুন বেনী) ধরিয়া টানিয়াছিলেন, তাহারাও বোধহয় অনুমান করিতে পারেন নাই নদীর জল এতোদূর গড়াইবে। আসলে ওই বিজ্ঞান, ইহার খপ্পর হইতে জগত সংসারের নিস্তার নাই।মানে সেই চিরপুরাতন ডিম আগে না মুরগি।বলি বিজ্ঞান কোথা হইতে আসিল?শিবের জটা হইতে নাকি গোমুখ হইতে এই তর্কে এককের মীমাংসা হইলেও বহুর হয় না।তাহা কেবলি হু হু করিয়া পাঁজরের ফাঁকে সুর তোলে পুকার লো বলিয়া।
আলেকজান্ডার,পূর্ব পদে নাম অপরিবর্তিত না রাখিলেও চলিত, কারণ পৃথিবীতে ভুল হইতে পেনিসিলিয়াম নোটেটাম মুড়াইলো না তাবৎ লোকের জুড়ালো হৃদয় জুড়ালো কিন্তু পুরুকে মনে রাখিল একমাত্র ইতিহাস বইয়ের পাতা। কারণ তিনি এক বাক্যে কহিয়া ছিলেন সকল মানুষের মনের কথাটি।অথচ আপোষ করিতে করিতে পাপোশ এ পরিনত হইলেও বুঝি মহিলাদের নিস্তার নাই।সিটি বাজিলেই তাহাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিমিত্ত ছুটিতে হইবে বিরিয়ানির শেয়ার(পড়ুন আলু,পড়ুন ডিম,পড়ুন চর্বি লেগে থাকা তুলতুলে খাসির টুকরো) উঠাইতে।সঠিক সময়ে আলতো নাড়াচাড়ায় সুস্বাদু উপাদেয় ফ্যামিলি ড্রামা পরিবেশন। কিন্তু অকালে সিটি বাজিলেই ক্ষিপ্ত মসল্লা যে যার মতো তাকাইয়া থাকে মস্ত বড়ো আঁকাবাঁকা লাইনে।অক্লান্ত গজল্লা করিবার সুযোগ দিয়া বৃন্দাবনী সারং বাজে অকারণেই। চোখ উল্টাইয়া মিথ্যা কথা বলা শেখেন মাতৃরূপেণ!!মাস,দিন,তারিখ,গোলমাল হ্যায়। সব গোলমাল হ্যায়। হায় কলি কাল। অলি গুনগুন করিলেও ফুলের সন্ধান আর পাওয়া যায় না। শুধু মুহূর্ত বা পল তাল ঠুকে বলে না না এ স্বাস্থ্য পরিসেবা কেন্দ্র নয়। এ আমাদের এই সভাঘর,অডিটোরিয়াম। চোখের আলোয় যেখানে বেজে ওঠে সুর। তুমি আসবে বলে…।রাঙা হাসি রাশি রাশি কাচ স্বচ্ছ, সকাল।

[পরম্পরা ওয়েবজিন, নভেম্বর ২৪, সূচিপত্র – এখানে ক্লিক করুন]