আজ থেকে প্রায় আনুমানিক খ্রিস্টীয় ১৩০০ শতকে এক কোঙ্কনী ব্রাহ্মন বঙ্গে আসেন ৷ বর্তমানে আমরা যে বঙ্গদেশকে জানি সে সময় তা ছিল না ৷ কোঙ্কনী ব্রাহ্মণটি এসেছিলেন পুন্ড্র বা উত্তরবঙ্গে ৷ খ্রীষ্টীয় শতক শুরু হবার পরে বল্লাল সেন বঙ্গদেশকে যে চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন তার মধ্যে মহানন্দা ও করোতোয়া নদীর মধ্যবর্তী ছিল এই বরেন্দ্রভূমি ৷
পরবর্তী কালে তাঁরই এক উত্তরপুরুষ শতানন্দ নবদ্বীপে আসেন ৷ শতানন্দের পুত্র জীব ঠাকুর ৷ অতি পণ্ডিত মানুষ ছিলেন ৷ নীল সরস্বতীর উপাসক জীবঠাকুরের পুত্র গদাধর ৷ জীবঠাকুরের প্রকৃত নাম ছিল হরিরাম তর্কবাগীশ ৷ এই বংশটি ছিল তার্কিক বংশ ৷ পাণ্ডিত্যের অহঙ্কার ছিল খুব ৷ প্রকৃত পক্ষে পণ্ডিতও ছিলেন তাঁরা ৷ সংস্কৃতে পাণ্ডিত্য ছিল গভীর ৷ ঋকবেদি ব্রাহ্মণ ছিলেন তাঁরা ৷
জীবঠাকুরের এক শিষ্য তাঁকে কিছুদিনের জন্য বগুড়া জেলার লক্ষ্মীচাপড়া গ্রামে নিয়ে যান ৷ সেখানেই তাঁর পুত্র গদাধরের জন্ম হয় ৷ গদাধরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তৃতীয় পুত্র গোবিন্দ ন্যায়পঞ্চানন খুবই বড় পণ্ডিত ছিলেন ৷ শোনা যায় একবার দ্বাদশীর দিন নবদ্বীপের গঙ্গার ঘাটে তিনি স্নান করার আগে যখন তেল মাখছিলেন তখন মিথিলার এক মহাপন্ডিত তাঁকে তর্ক যুদ্ধে আহ্বান করলে সূর্যাস্তের পূর্বে তাঁকে তর্ক যুদ্ধে পরাজিত করে তাঁর বসার কুশাসনটি অতি তাচ্ছিল্যে সেই পন্ডিতের মাথায় নেড়ে দিয়ে বলেছিলেন – যেখানে গদাধর বংশের উত্তরপুরুষ থাকবে তার সঙ্গে তর্কে যাবেন না ৷
ওই অপমানিত পণ্ডিতের অভিশাপেই গোবিন্দের ধারাটি নাকি লোপ পায় ৷ নীল সরস্বতীও বিরূপ হন ৷ গোবিন্দের মা শিবভক্ত ছিলেন ৷ শিবের আশীর্বাদে তাঁর অন্য পুত্রদের ধারা লুপ্ত হয়না বলেই তাঁরা মনে করতেন ৷ নবদ্বীপের পোড়ামা বা পোড়োমা এই বংশেরই ইষ্টদেবী ৷


গদাধরের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম তর্কালঙ্কার তদানীন্তন রাজশাহীতেই বসবাস করেন ৷ সে সময় তাঁর এক শিষ্য তাঁকে নাটোর সাবডিভিসনের একটি গ্রাম দান করেন ৷ গ্রামটির নাম আগদীঘা ৷ তিনটি গ্রাম ছিল আগদীঘা , মাঝদীঘা , পিছদীঘা ৷ ইতিপূর্বে বরেন্দ্রভূমিতে থাকা কালেই তাঁরা বারেন্দ্র শ্রেণীভূক্ত হন ৷ রামতর্কালঙ্কারের উত্তরপুরুষেরা নামের পূর্বে রাম শব্দটি ব্যবহার করেন ৷
রাম তর্কালঙ্কারের উত্তরপুরুষ রামকুমারের পুত্র রামকেশব তার পুত্র রামতারণ ভট্টাচার্য নাটোরের রাজবংশীয় এক শিষ্যার আমন্ত্রণে গত শতাব্দীর তিনদশকে অর্থাৎ ১৯২৫-৩০ সাল নাগাদ কাশী বা বর্তমানের বেনারসে চলে যান ৷ ওই রাজবংশীয় শিষ্যার দাক্ষিণ্যে জমিদারসম অবস্থা ছিল তাঁদের ৷ বাড়িতে দুটি হাতি ছিল ৷ রামপিয়ারী ও শ্যামপিয়ারী ৷ প্রচুর দাসদাসী ৷ কিন্তু চিরদিন কারও সমান যায় না ৷ ধীরে ধীরে হাতি দুটি বিক্রয় করা হয় ৷ দাসদাসীও কমে যায় ৷
রামতারণের দুটি বিবাহ হয়েছিল ৷ প্রথম স্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় মারা যাবার পর তিনি ৫৫ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন ৷ স্ত্রীর নাম কমলেকামিনী ৷ সবাই ডাকতো কমলিঠাকরুণ ৷ তাঁদের দুটি পুত্র ও তিনটি কন্যা ৷ পুত্রদের নাম রামনারায়ণ ও রামজীবন ৷ কন্যা তিনটির নাম মহাকালি , মহামায়া ও যোগমায়া ৷

[পর্ব- ১]

[পরম্পরা ওয়েবজিন, সেপ্টেম্বর ২৪, সূচিপত্র – এখানে ক্লিক করুন]